সামাজিক দূরত্বের ( Social Distance) মাধ্যমেই আমরা সহজে করোনার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত আমাদের জানা কিছু তথ্য ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।
বিশেষ করে আমরা পুরো মার্চ মাসে এই বিষয়ে যা শিখলাম এবং আমরা যে আচরণবিধিগুলো মেনে চলছি- সেটা এখানে তুলে ধরছি । www.coastbd.net এর নোটিশ বোর্ডে এই বিষয়ে বিস্তারিত আরও অনেক কিছু পাওয়া যাবে, যেমন-পরিবর্তিত আচরণবিধি, ৫টি লিফলেট, যার একটি বার্মিজ ভাষায় তৈরি, ৯০ সেকেন্ড সময়সীমার ৪টি ভিডিও, যার একটি চট্টগ্রামের এবং একটি রোহিঙ্গা ভাষায় তৈরি। আমরা ইতিমধ্যে ১০ মার্চ থেকে উপকূলীয় এলাকার ৪৭টি উপজেলার ৮৪ লক্ষ মানুষের কাছে করোনা সম্পর্কিত সচেতনতার বার্তাগুলো পৌঁছেছি, আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পেও কাজ করেছি।
আগামী ২৮-২৯ মার্চ আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সচেতনতা প্রচারাভিযান চালাবো। এই ছুটির সময়ও আমাদের অফিসগুলো সীমিত সংখ্যক নেতৃস্থানীয় কর্মী নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তৈরি থাকবে। আমাদের সমস্ত নেতৃস্থানীয় কর্মীদের মোবাইল ফোন খোলা থাকবে।
১. হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন, অথবা আপনার কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে ফেলুন। প্রতি সন্ধ্যায় রুমালটি ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
২. খোলা জায়গায়, যেখানে-সেখানে থুথু বা কাশি ফেলবেন না। ইচ্ছে করলে থুতু বা কফ আপনি গিলে ফেলতে পারেন।
৩. কোনও জায়গায় প্রবেশ করার সময় প্রতিবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে, সিঁড়ির র্যালিং বা এ ধরনের জিনিস স্পর্শ করার পরে অবশ্যই ভালভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. অন্য ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রাখুন।
৫. বাইরে যাওয়ার জরুরি প্রয়োজন হলে, একবার ভোরে এবং একবার সন্ধ্যায় যান। তা যেন হয় খোলা জায়গা। হতে পারে মাঠ বা বাড়ির ছাদ। মুক্ত হাওয়া সেবন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
৬. কোনও হ্যান্ডশ্যাক এবং কোনও আলিঙ্গন নয়, সালাম বা নমস্কার দিন।
৭. মুখ থেকে থুতু নিয়ে টাকা গণনা করবেন না বা বইয়ের পৃষ্ঠা পরিবর্তন করবেন না, পানির স্পঞ্জ ব্যবহার করুন।
৮. প্রতি সন্ধ্যায় আপনার কাপড় পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
৯. আপনি আপনার ঘরে প্রবেশের সময় ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তৈরি জীবাণুনাশক (২০ লিটার পানিতে ১ টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডারের মিশ্রণ) দিয়ে আপনার জুতোর নিচে স্প্রে করুন, যাতে তা জীবাণুমুক্ত হয়।
১০. প্রতিবার বাড়িতে বা অফিসে প্রবেশ করার সময় আপনার মোটর সাইকেল বা গাড়িতে (উপরে উল্লিখিত হিসাবে একই মিশ্রণ) স্প্রে করুন, যাতে তা জীবাণুমুক্ত হয়।
১১. যেহেতু আপনি এখন ঘরে থাকবেন, সকাল এবং সন্ধ্যায় ১৫ মিনিটের হালকা ব্যায়াম করুন। যখনই সম্ভব হয়, প্রতিবার ২০ মিনিট করে ২ বার বাসার মধ্যে হাঁটার চেষ্টা করুন। এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
১২. লেবুসহ শাকসবজি, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার দৈনিক আহারের তালিকায় রাখুন।
১৩. পত্রিকা পড়ুন, নিজেকে সবসময় আপডেট বা হালনাগাদ রাখুন, আশার খবরগুলো সবাইকে শোনান, করোনা সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতাগুলো জানার চেষ্টা করুন, পরিবারের সবার সাথে খবরগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। সবসময় হাসিখুশি থাকুন। পারিবারিক কাজে সবাইকে সহায়তা করুন। নিজেকে উৎফুল্য রাখুন। অন্যকে উৎফুল্য রাখুন। কোনভাবেই মানসিক চাপ আমাদের যেন ঘায়েল করতে না পারে।
আপনি যদি কেবল এই অভ্যাসগুলো করতে না পারেন, আপনার পরিবার বা অফিসের সবাই যদি এই নিয়মগুলো অনুসরণ না করে, তবে করোনা ভাইরোস প্রতিরোধ খুব কঠিন হবে। দয়া করে মনে রাখবেন যে, আমাদের দেশে আবহাওয়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় , তাই আমাদের দেশে কাশি, সর্দি, এলার্জি খুব সাধারণ বিষয়। এগুলোর পাশাপাশি আপনার যদি জ্বর হয়, ভিটামিন সি/লেবুর রস পান করুন এবং বিশ্রাম নিন । সাধারণ জ্বর-সর্দি কাশিতেই আমাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই, তবে এগুলির পাশাপাশি আপনার যদি শ্বাসকষ্ট হয়, যদি আপনি জিহ্বায় স্বাদ না পান এবং নাকে কোনও কিছুর গন্ধ না পান, তবে আপনি চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। এরকম হলে ডাক্তারকে ফোন করুন, নইলে না।
রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট।
পাঠকের মতামত