গত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে বিভিন্ন অপরাধে দুই হাজার ২০০ অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলো মোকাবিলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও সব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রোববার (১ আগস্ট) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান। এ সময় জননিরাপত্তা সচিবসহ সব বাহিনীর প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এক প্রশ্নে বেনজীর আহমেদ বলেন, সেখানকার সিকিউরিটি ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। আগে যেখানে চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে দুই হাজার ২০০ জন কাজ করতেন, এদেরকে সাময়িকভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে এনে নিয়োগ করা হতো।
তিন মাস পর পর রোটেট করা হতো। এ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে নতুন করে একটি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে আরও একটি ব্যাটালিয়নকে রিলোকেট করেছি। এখন তিনটা ব্যাটালিয়ন ওখানে ৩৪টি ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে। আমরা ৩৪টি ক্যাম্পকে ক্লাস্টারে পুনর্নিন্যস্ত করেছি, একেকটা ক্লাস্টারের দায়িত্ব একেকটা এপিবিএন ক্যাম্পকে দেওয়া হয়েছে। আমরা ওখানে ২২টি এপিবিএন ক্যাম্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি, মোটরসাইকেল পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি গাড়ি ইউএনএইচসিআর দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এখন রাতে টহল দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ক্যাম্প রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে নেওয়া হয়েছে।
বেনজির আহমেদ বলেন, গত দুই বছরে দুই হাজার ২০০ অপরাধীকে গ্রেফতার করেছি। ক্যাম্পগুলোকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের অপতৎপরতা হয়, ইয়াবার ব্যবসা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের অপতৎপরাতা নিয়ন্ত্রণে করার জন্য এখন ক্যাম্পের পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো।
সেনা সহায়তায় ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, বেড়া দেওয়া শেষ হলে আমি মনে করি যে ক্যাম্পে এখন যে অবাধ চলাচলের বিষয় আছে সেটি বন্ধ হবে। এ বেড়ার বাইরে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হচ্ছে, এটা তৈরি করা হলে আমাদের পক্ষে ক্যাম্পের বাইরে টহল দেওয়া সুবিধা হবে। ক্যাম্পের বাইরে কিছু ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্ষার কারণে কাজের গতি একটু কম। আমরা আশা করছি বেড়া দেওয়া, ওয়াকওয়ে ও ওয়াচ টাওয়ার এ বছরের মধ্যে নির্মাণ করা হবে। এসব কাজ শেষ হলে ক্যাম্পের শৃঙ্খলার জন্য আরও সুবিধা হবে।
ক্যাম্পের বাইরে যৌথ টহলের ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ওই অঞ্চলে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী কাজ করে। রামুতে ১০ পদাদিক ডিভিশন রয়েছে। তারা ক্যাম্পের বাইরে যৌথ টহল দিচ্ছে। সেখানে যে তিনটি ব্যাটালিয়ন কাজ করে কক্সবাজার শহরে, সেগুলোকে উখিয়া ও টেকনাফে নিয়ে যাব। যৌথ বাহিনীর টহলের জন্য এসওপিও করার কাজ চলছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত এক মাস ধরে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে বিশেষ করেরনোয়াপাড়া ক্যাম্পে খাবার বিতরণ নিয়ে এ বিষয় নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, খাদ্য নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে সেখানে স্থানীয়ভাবে ইউএনএইচসিআর, ইউএনডিপি, আইওএম কাজ করে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আরআরআরসি কাজ করছে। সমস্যা নিরসনে সবাই কাজ করছে। আমি মনে করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেক ধরনের প্রশাসনিক বিষয় আছে। ১৯৭৯ সাল থেকে বিভিন্ন বিষয় আছে। মাঝে মধ্যে প্রত্যাবর্তন হয়েছে, আবার সীমানা পার হয়েছে। আগে থেকে যারা ছিল তাদের এক ধরনের রেশন দেওয়া হয়, নতুন যারা এসেছেন তাদের আরেক ধরনের রেশন দেওয়া হয়। এখানে অনেক ধরনের ইস্যু আছে সেগুলো বাংলাদেশ সরকারের ইস্যু নয়। সেখানে যারা কাজ করছে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি কাজ করছে।
পাঠকের মতামত