যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জোরদার করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। আর ইভ টিজিং রোধে প্রয়োজনে স্কুল-কলেজেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে।
কয়েক মাস ধরেই স্কুল-কলেজ পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানি ও নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় এ নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সোমবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ইভ টিজিং এর ক্ষেত্রে স্কুল কলেজেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বিগত কয়েক মাসে বিভিন্ন ঘটনার পর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জোরদারের সিদ্ধান্ত আসে গত ২৫ সেপ্টেম্বরের বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসকদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রাখা এবং জোরদারের নির্দেশ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায় বলা হয়, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।
মাঠ প্রশাসনে সরকারের নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নকারী জেলা প্রশাসকদের আগে থেকেই নির্দেশনা রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার। কিন্তু ভেজালবিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং অভিযান পরিচালনায় যত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়, সেই তুলনায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কম হয়।
এ প্রসঙ্গে মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাস পুরকায়স্থ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এই বষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, অথচ তা হয় না। আইন না হওয়া পর্যন্ত ২০০৯ সালে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী এটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং তা মানতে হবে। আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যতটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন নীতিমালা বাস্তবায়নে কমিটি থাকার নির্দেশনা থাকলেও, তা সব প্রতিষ্ঠানে নেই। এটিও দেখা উচিত। এছাড়া, মানুষের যথেষ্ট সচেতনতা নেই। সরকারকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এ দুমাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার (বিএমবিএস) তথ্য মতে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে শিশু হত্যার ঘটনা ২৩ এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩১ জন নারী ও শিশু।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, অক্টোবর মাসে দেশে মোট ৪৪৬ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ৭৫ জন নারীকে। ইভটিজিংসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ৩৬ জন নারী।
এসব ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, শিক্ষা ও নারী শিশু মন্ত্রণালয় জানায়, শিশু ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ঘটনায় দণ্ড দেওয়া হয়েছে বখাটেদের।
নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গায় সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে তারিকুল ইসলাম নামের এক বখাটের এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত আছে এবং প্রয়োজনে আরও জোরদার করা হবে।