উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
প্রতি বছর পয়লা সেপ্টেম্বর দেশে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এ বছর মৌসুম শুরুর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কক্সবাজারে দেখা নেই দেশি-বিদেশি পর্যটকের।
শত শত হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়। শেফ থেকে শুরু করে বয়-বেয়ারার পেছনে অগ্রিম বেতন, প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যে টাকা ব্যয় হয়েছে তা আদৌ উঠে আসবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। চলতি বছর আশানুরূপ পর্যটক না আসায় কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে বলে মনে করছেন মালিকরা। এ ক্ষেত্রে উখিয়া ও টেকনাফে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থানই একমাত্র কারণ বলে জানান তারা। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে পর্যটননগর কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও রোহিঙ্গাদের অবস্থান কক্সবাজার মূল শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। তার পরও তাদের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বাস্তব পরিবেশ-পরিস্থিতি তুলে ধরবে বলে প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে শীত মৌসুমে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটে। এর একটি অংশ জেলার মহেশখালী, টেকনাফ ও একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন এখানে। পর্যটকের মধ্যে দেশি পর্যটকের সংখ্যা বেশি হলেও বিদেশির সংখ্যাও কম নয়। আর এই পর্যটন খাত থেকে আসে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। এবার পর্যটন ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় রাজস্ব আয়েও এর প্রভাব পড়তে পারে। সাধারণত ১ সেপ্টেম্বর পর্যটন মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজারে দেশি পর্যটক আসেন কোরবানির ঈদের ছুটিতেও। কিন্তু এবার ঈদের আগের সপ্তাহ থেকেই মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসতে শুরু করায় পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার লোকেরাও এখানে আসছেন। ফলে কক্সবাজারে এখন পর্যটকের বদলে দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থার লোকজন দেখা যায়। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এই সময়ে কক্সবাজারের ৭০-৮০ শতাংশ হোটেলকক্ষ বুকিং থাকত। কিন্তু এবার তিন ভাগের এক ভাগও বুকিং হয়নি। ব্যবসার পেছনে যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে তা উঠে আসে কিনা সন্দেহ। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, কক্সবাজারের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করে সেন্ট মার্টিন। দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ হওয়ায় এ দ্বীপের প্রতি দেশি-বিদেশি সবার প্রবল আগ্রহ থাকে। কিন্তু এখনো সেন্ট মার্টিন যাওয়ার নৌরুটে কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমোদন পাওয়া যায়নি রোহিঙ্গাদের কারণে। কয়েকজন পর্যটক জানান, তাদের ধারণা ছিল মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা পর্যটননগর কক্সবাজারে গিজ গিজ করছে। এজন্য তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং আরও নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কিন্তু এখানে রোহিঙ্গাদের কোনো দেখা নেই। তাদের দেখতে হলে এক ঘণ্টার বেশি গাড়ির দূরত্বে যেতে হয়। এ ধারণা দূর করতে পারলে পর্যটক আসা শুরু হবে বলে তারা মনে করেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, ‘সৈকতসহ পুরো কক্সবাজার ও ট্যুরিস্ট জোনগুলোয় আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করেছি। রোহিঙ্গাদের কোনো প্রভাব ও অস্তিত্বই এখানে নেই। ’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটের কারণে এবার পর্যটক আসা কমে গেছে। মানুষের মনে এক ধরনের অজানা ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তা কাটিয়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ’