জেলা সদর হাসপাতালের ডাঃ সত্যম সরকারের রোগীর সঙ্গে অশালীন আচরণ ও ৫ হাজার টাকা দাবীর ঘটনায় ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাঃ মোঃ আয়ুব আলী ও হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মোঃ শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী।
কমিটিকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ পু চ নু। আজ দুপুরে কমিটি গঠিত হয়।
২০ জুলাই দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১০ টা। মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়ে রাসেল নামের এক রোগী জেলা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যান। ওই সময় ডিউটি ডাক্তার ছিলেন সত্যম সরকার।
পায়ের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আহত রাসেল। বন্ধু-স্বজনরাও হাউমাউ করছে। ঠিক ওই সময়ে চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দাবী করে বসলেন ডাক্তার সত্যম সরকার। আহত রাসেলের বাড়ী টেকনাফের হাবিরপাড়ায়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, আহত রাসেলকে চিকিৎসার জন্য বললে ডাক্তার সত্যম সরকার কোন চিকিৎসা দেননি। দূর্ঘটনায় পায়ের কেটে যাওয়া অংশে সেলাই করতে হবে জানিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। এমন কি এক টাকা কম হলেও সেলাই হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন ডিউটি ডাক্তার সত্যম সরকার। এভাবে আহত রাসেলকে প্রায় দুই ঘন্টা জরুরী বিভাগে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়।
ওই সময় হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, রাসেলকে সেলাই করতে হবে। অবস্থা ভাল না। তাই ডাক্তার সাহেবকে একটু দ্রুত ব্যবস্থা করতে বললাম। তিনি ৫ হাজার টাকা দাবী করে বসলেন। হাসপাতালের কর্মচারী সেলিম টাকা না নেয়ার সুপারিশ করলেও বেকে বসেন ডাক্তার সত্যম সরকার। সাফ জানিয়ে দেন শনিবারের আগে কোন সেলাই বা চিকিৎসা হবেনা। একজন সরকারী ডাক্তার ৫ হাজার টাকা দাবি করায় হতভাগ হয়ে পড়ে রোগীর স্বজনরা।
স্বজনেরা আরো জানায়, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। পা থেকে অবিরত রক্ত ঝরছে। ন্যূনতম মানবিকতাও দেখালেন না ডাক্তার। উপায় না পেয়ে ৪ হাজার টাকা জোগাড় করে। যেখানে ১০ টাকার টোকেনে চিকিৎসা দেয়া হয় সেখানে ৪ হাজার টাকায়ও মন গলেনি নিষ্ঠুর ও নৈতিকতা হারানো ডাক্তার সত্যম সরকারের। দাবী মতে ৫ হাজার টাকা না পেয়ে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি দেয় এবং শনিবারের আগে সেলাই ও চিকিৎসা হবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
এ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিত হাসপাতালে গিয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার সত্যম সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো ক্ষতি করিনি ভাই। আপনারা কেন আমাকে এভাবে হেরাজমেন্ট করবেন?
এটি কি প্রাইভেট হাসপাতাল যে টাকা দাবী করবেন? সরকারী হাসপাতালে বসে কিভাবে টাকা চাইলেন? জানতে চাইলে একই উত্তর- ‘আমি তো আপনাদের ক্ষতি করতে চাইনি। এটা তো সার্জারী রোগী। আমি কি করতে পারি?
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালে একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের এমন অমানবিক ও অন্যায় আচরণের খবর পেয়ে ছুটে যান সাংবাদিক ইমরুল কায়েস চৌধুরী। অভিযুক্ত ডাক্তারের কাছে জানতে চান- কেন টাকা দাবী করেছেন? যদিওবা এ বিষয়ে ডাক্তার সত্যম সরকারের সন্তুষজনক উত্তর ছিলনা।
তিনি জানান, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী ওই রোগীর বিষয়ে খবর পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত সেলাই করার নির্দেশ দেন এবং ডাক্তার সপ্তম সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
হাসপাতালের এই ডাক্তারের ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম আজাদ বাবু জানান, কয়েক দিন আগে মোটর সাইকেল এক্সিডেন্ট এক রোগী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছেনা। অবহেলায় পড়ে আছে। ফোন পেয়ে আমি হাসপাতালে গেলাম। দেখি রোগী শুয়ে আছেন। অথচ পাশের চেয়ারেই ডাক্তার বসে আছেন। জানলাম ওনার নাম সত্যম সরকার।
অনেক বলার পরেও চিকিৎসা না করায় আমার পরিচিত একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে ফোন দিয়ে পাঁচতালা থেকে নিচে আনলাম। ওনি অনুরোধ করেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগিকে ওয়ার্ডে রেফার করেন।
ছানাউল্লাহ সানি নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ঈদের চতুর্থ দিনে চিকিৎসা নিতে গেলে তাকে ওই একই ডাক্তার হয়রানী করেন।
রফিক আহমদ ডালিম নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, আমার এক বছর বয়সের বাচ্চাকে জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তার সাহেব আমাকে বলেন- ‘এখানে হবে না স্পেশালিস্ট দেখান।’ জ্বর আর কাশি ছিল আমার ছেলের। আমি তার দিকে বোবার মত তাকিয়ে রইলাম। অনেক অনুনয় বিনয় করে চিকিৎসা নিয়ে চলে আসি। সপ্তম সরকার দুইবার এমন আচরণ করলেন।
গিয়াস উদ্দিন আহমদ নামের একজন জানিয়েছেন, কক্সবাজার সরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তার হালের বলদ। আইডিয়া দিয়া কাজ চালান। যা মন চায় তা করে। কয় দিন পর ছেড়ে দেয়। ওরা নিজেরাও জানে না রুগির অবস্থা। রোগটা কি? আর চিকিৎসা কি করা লাগবে? ৩/৪ দিন রাখার পর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সপ্তম সরকারদের মতো ডাক্তারের কারণে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা পায়না।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার পু চ নু কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)কে জানান, রোগী-স্বজনদের সাথে অশালীন আচরণসহ ডাক্তার সত্যম সরকারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। শুনতে শুনতে মাথা হেড হয়ে যায়। এবার আর সহ্য করা হবেনা। জরুরী ভিক্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র: সিবিএন
পাঠকের মতামত