প্রকাশিত: ০৮/০১/২০১৭ ৭:৫৩ এএম

নিউজ ডেস্ক :
কক্সবাজারবাসীর বহুল প্রত্যাশিত সরকারি মেডিকেল কলেজে আজ থেকে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে ৭ টায় প্রথম ক্লাস শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ। ইতিমধ্যে নতুন নির্মিত মূল ক্যাম্পাস ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবন ছাড়াও রয়েছে ২ টি আলাদা হোস্টেল ভবন, প্রসস্থ ক্লাস রুম, প্রশিক্ষণ রুম, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, মিলনায়তন, ডরমেটরী, প্রসস্থ খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, মসজিদসহ বেশ কিছু আধুনিক সুযোগ সুবিধা। সংশ্লিষ্টদের মতে এটি খুবই মানসম্মত এবং একটি আধুনিক মেডিকেল কলেজ হয়েছে যা দেশের মধ্যে অন্যতম। আপাতত মেডিকেল কলেজ কাম হাসপাতাল না হলেও খুব দ্রুত ৫০০ শয্যার হাসপাতালও এখানে গড়ে তোলার জন্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এদিকে নতুন বছরেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম করতে পারায় বেশ আনন্দিত মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে কক্সবাজারের একটি নতুন পথচলা শুরু হলো যা আগামীতে কক্সবাজারের চিকিৎসা সেবায় একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
কক্সবাজার  সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আজ থেকে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের মূল ভবনে আনুষ্ঠানিক শ্রেণি কার্যক্রম বা ক্লাস শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। সকাল সাড়ে ৭ টায় নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী ক্লাস শুরু হবে। ইতিমধ্যে কলেজের সরাঞ্জাম স্থানান্তর করাসহ নতুন আরো অনেক কিছু স্থাপন করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু সংযোজনের অপেক্ষায় আছে। আমি বিশ্বাস করি এটি বাংলাদেশের একটি নান্দনিক মেডিকেল কলেজ হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এটি কক্সবাজারের মানুষের সম্পদ। তাই এটিকে লালন ও ধারন করতে হবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ তালুকদার বলেন, ২০১২ সালে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়। এতে ৬ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের জন্য ৪১ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী ব্যয় করে একাডেমিক ভবন আর ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরুষ আর মহিলাদের জন্য ২ টি আলাদা হোস্টেল ভবন ছাড়াও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ কাজ আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করেছি। বর্তমানে মেডিকেল কলেজ ভবন সম্পূর্র্ণ প্রস্তুত। কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোন মূহুর্তে কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
এদিকে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও নতুন নির্মিত মূল ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে পেরে খুবই আনন্দিত সবাই । এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ফরিদুল হক বলেন, আমি খুবই আনন্দিত। একটি ইতিহাসের অংশ হতে পেরে আমরা হয়তো থাকবো না কিন্তু এই বৃহৎ প্রতিষ্ঠান স্ব-গৌরবে থাকবে। আর বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ আন্তরিকতার কারনে যথাসময়ে এক বড় বাজেটের কাজ শেষ হয়েছে। এ জন্য সরকারের দায়িত্বশীল সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ। বিশেষ করে আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় এ বিষয়ে খুব আন্তরিক ছিলেন। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ ফার্নিচারসহ প্রয়োজনীয় সরাঞ্জাম মূল ভবনের স্থাপন হয়েছে। তাছাড়া এখানে যেসব সুযোগ সুবিধা আছে সেগুলো খুবই উন্নতমানের। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য এটা খুবই সু-ভাগ্যের বিষয় যে তারা একটি ভাল পরিবেশে এমবিবিএস পাস করার সুযোগ পাবে। তবে খুব দ্রত অন্তত ২ টি গাড়ী দেওয়া দরকার যাতে শিক্ষার্থীরা কক্সবাজার হাসপাতালে এসে তাদের ওয়ার্ড প্রশিক্ষণ বা নিয়মিত ক্লাস কর্যক্রম শেষ করতে পারে।
সহযোগি অধ্যাপক ডাঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই মুল ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হবে এরকম একটি পরিকল্পনা ছিল সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে।  আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই আনন্দিত যে এখন থেকে মেডিকেল কলেজ তার নিজস্ব ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে। একই সাথে আগের মেডিকেল কলেজের স্থানে আরো নতুন কোন চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে যা থেকে কক্সবাজারের মানুষ উপকার পাবে। এই বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতাকে আসলেই ধন্যবাদ জানাতে হবে। কারন বাজেট বরাদ্দ সময় মতো না হলে কোন কাজের সফলতা দেখা যায় না। সে ক্ষেত্রে কক্সবাজারবাসী ভাগ্যবান যে তারা যথাসময়ে বরাদ্দ পেয়েছে এবং কাজও শেষ হয়েছে।
সিনিয়র ডাঃ এমএ কামাল বলেন, আমি যতটুকু জানি গতকাল মিলাদ পড়ানো হয়েছে এবং আজ থেকে ক্লাস শুরু হবে। এখন থেকে ছেলে মেয়েরা একটি উন্নত পরিবেশে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে পারবে কারন নতুন মেডিকেল কলেজ ভবনে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে সেটা দেশে কোন মেডিকেল কলেজে আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।  আমার বিশ্বাস কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ খুব তাড়াতাড়ি সারাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রধান আগ্রহস্থান হবে। তবে এখানে কিছু কার্যক্রম এখনো সদর হাসপাতাল কেন্দ্রীক রয়ে গেছে। তাদের জন্য বিশেষ গাড়ীর ব্যবস্থা করা খুব দরকার।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী। উনার রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে একটি বিশ্বমানের মেডিকেল কলেজ করার স্বপ্ন উনার নিজের ছিল। তাই তিনি ২০১২ সালে নিজ হাতে এই কলেজের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন এবং সময়ের আগেই সেই কাজ এখন সমাপ্ত। এখানে ৬ তলা বিশিষ্ট আধুনিক একাডেমিক ভবন, ২ টি আলাদা হোস্টেল ভবন, ল্যাবরেটরি, প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম, লাইব্রেরী, ক্লাস রুম, প্রসস্থ খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, মসজিদসহ সব ধরনের স্থাপনা রয়েছে। এখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা কর্মকর্তারা পরিদর্শন শেষে মন্তব্য করেছে এটি এযাবত কালের দেশের সবচেয়ে মনোরম এবং আধুনিক মেডিকেল কলেজ। এবং সামনে দেশের বাকি মেডিকেল কলেজগুলোও এই আদলে করা হবে। আমি মনে করি আমরা কক্সবাজারবাসী অত্যন্ত ভাগ্যবান যে আমরা একটি পরিপূর্ণ মেডিকেল কলেজ পেয়েছি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ও বিএমএ সভাপতি ডাঃ পুচনু বলেন, নতুন বছরেই নতুন উপহার হবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। এর সাথে খুব দ্রুত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালও করার জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থাকবে। আমরা যতটুকু জানি হাসপাতাল নির্মাণে খুব দ্রুত বাজেট আসবে। এতে কক্সবাজারের চিকিৎসা ব্যবস্থা বহুগুনে উন্নত হবে। এবং কক্সবাজারের স্থানিয় মানুষ এর ভাল সুফল পাবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল আমিন মিয়া বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজ  শেষ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এবং সময়মত কাজ শেষ করতে পারায় নিজের কাছেও ভাল লাগছে। এবং ক্লাস শুরু হবে শুনে খুবই ভাল লাগছে কারন আমি ও একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকতে পারবো। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

অভিভাবকহীন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা’র সীমান্তঘেষা ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ’র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি’দের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে গত নভেম্বর ...