উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং ক্লাশের নামে সহ¯্রাধিকের বেশী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ছয় লক্ষাধিকের বেশী টাংকা আদায়ের করছে কক্সবাজারের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এমন কি কেউ কোচিং ক্লাশ করতে অনীহা প্রকাশ করলে ছাত্রীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ রয়েছে অভিভাবকদের।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়মিত পাঠদান ক্লাশের আগে পরে কোচিং (বিশেষ ক্লাশ) এর নামে প্রতিজন ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে এসব টাকা আদায় করা হয়। যদিও স্কুলে কোচিং ক্লাশ না করানোর ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
এ নিয়ে সন্তানদের নানা সমস্যার কথা চিন্তা করে ভূক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক। তবে শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীদের কোচিং ক্লাশ করানোর বিষয়টি স্বীকার করলেও অন্য ক্লাশের ছাত্রীদের কোচিং করানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছা বেগম।
সেই সঙ্গে কোচিং ক্লাশ করতে অনীহা প্রকাশকারি ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয় ২ টি শিফটে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ২ টি শিফটে স্কুলটিতে ছাত্রীদের সংখ্যা ১ হাজার ২৪৫ জন। প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাশের আগে ও পরে নেয়া হয় এ বিশেষ ক্লাশ (কোচিং)। আর প্রতিজন ছাত্রীর কাছ থেকে প্রতিমাসে আদায় করা হয় ৫০০ টাকা হারে। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিমাসে কোচিং বাণিজ্যের নামে আদায় করা হচ্ছে ৬ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা।
পেশায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন অভিভাবকের মেয়ে পড়ালেখা করে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীতে। তিনি মেয়েকে স্কুলের কোচিং ক্লাশে পড়াতে রাজী নন। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ছাত্রীটিকে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
স্কুলে মেয়ের নানা সমস্যা হওয়ার কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দিতে পারেননি বলে জানান ভূক্তভোগী আরেক অভিভাবক আব্দুল হাকিম।
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। কোচিং ক্লাশে পড়তে অনীহা প্রকাশ করায় তার উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। স্কুলে মেয়ের নানা অসুবিধার হওয়ার কথা চিন্তা করে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করিনি। এক প্রকার বাধ্য হয়ে মেয়েকে স্কুলের কোচিং ক্লাশে পড়াতে হচ্ছে।’
কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার মুদির দোকানী ননী গোপাল দাশ। স্কুলটিতে তার এক মেয়ে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। কোচিং ক্লাশ করতে অনীহা প্রকাশ করায় তার মেয়ের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
ননী গোপাল বলেন, ‘আমি সামান্য মুদির দোকান থেকে আয়-রোজগার দিয়ে সংসার চালাই। আমার এক ভাইপো বাড়ীতে মেয়েটিকে পড়ায়। মেয়েটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে কোচিং ক্লাশ করতে অনীহা জানালে তার উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরে মেয়েটি বাসায় এসে কান্নাকাটি শুরু করলে বাধ্য হয়ে কোচিং ক্লাশে পাঠাতে বাধ্য হই।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছা বেগম বলেন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের স্কুলে কোচিং ক্লাশে পড়িয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি সত্য নয়। শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণীর ২ টি শিফটের ছাত্রীদের কোচিং ক্লাশে পড়ানো হচ্ছে। তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা ফি নেয়া হয়।
সেই সঙ্গে কোচিং ক্লাশ করতে অনীহা প্রকাশকারি ছাত্রীদের উপর জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ক্লাশ না করার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা থাকার কথা নিয়ে তিনি কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজী হননি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ক্লাশে না পড়ানোর সরকারি নির্দেশনা থাকার কথা উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোডর্, চট্টগ্রাম এর স্কুল পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি প্রথমবার শুনলাম মাত্র। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যদি লিখিতভাবে অভিযোগ জানায় তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই কথা জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাক। প্রয়োজনে গোপনীয়তা রক্ষায় তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত