ঢাকা: শিক্ষক হয়েও ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করে গেছেন তিনি একের পর এক। তার অতীত আর বর্তমান দু’টোই যৌন নিপীড়নের কালিমামাখা। অবশেষে নিজের এহেন ঘৃণ্য কাজের দায় মাথায় নিয়ে সদ্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেন ওরফে রাজীব মীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তিনটি তদন্ত কমিটিই তাকে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
ছাত্রীদের সঙ্গে এহেন নোংরা আচরণ তিনি তার আগের কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও করেছেন বিস্তর। কিন্তু সেখানে কোনোমতে পার পেয়ে গেলেও এবার জবিতে এসে আর শেষরক্ষা হয়নি শিক্ষক নামের এই যৌনপীড়কের। আপন কর্মফল এবার ঠিকই ভোগ করতে হলো তাকে।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসজুড়ে রাজীব মীরের বিরুদ্ধে তার নিজ বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ তুললে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টনক নড়ে। প্রশাসন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তিনটি কমিটিই তাকে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত করে। এই কমিটিগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় রাজীব মীরকে।
তদন্ত কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজীব মীরের বিরুদ্ধে জবিতে প্রথম যৌন নির্যাতনের অভিযোগটি ওঠে ২০১৬ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রী ওই বছরের ৫ এপ্রিল রাজীব মীরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। এসবের মধ্যে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছাড়াও একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ছিল।
আগের কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও যৌনপীড়নে অভিযুক্ত হয়েছিলেন রাজীব মীর
ওই ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেজারার সেলিম ভূঁইয়াকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রাথমিক তদন্তে ছাত্রীর দেওয়া মোবাইল ফোনের রেকর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণাদিতে ঘটনার সত্যতা পেয়ে একই বছরের ১১ এপ্রিল রাজীব মীরকে বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়। এরপর কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের পক্ষে অকাট্য প্রমাণ মেলায় ওই বছরের ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১তম সিন্ডিকেট সভায় রাজীব মীরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সেই সাময়িক বরখাস্তের রেশ না কাটতেই আবারও তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন একই বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কয়েকজন ছাত্রী।
পাঠকের মতামত