প্রকাশিত: ০১/০৭/২০১৬ ৮:১৬ এএম

আতিকুুর রহমান মানিক।

চলমান রমজান মাসের শেষ শুক্রবার অর্থাৎ পবিত্র জুমআতুল বিদা আজ। জুমআ শব্দটি আরবি যার অর্থ হচ্ছে- একত্রিত হওয়া, দলবদ্ধ হওয়া, সমবেত হওয়া ইত্যাদি। কুরআনুল কারিমে এই দিনটিকে ইয়াওমুল জুমুআ নামে নামকরণ করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর এই দিনটিকে জুমার দিন নামকরণ করেছেন এবং মদিনায় যাওয়ার সময় কুবা নামক স্থানে জুমআ`র নামাজ আদায় করেছিলেন।
অর্থাৎ জুমাআতুল বিদা বলা হয় পবিত্র রমজান মাসের শেষ জুমআ`কে। এমনিতেই জুমআ`র দিনটি সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে অধিক ফযিলতের। রমজান মাসের শেষ জুমআ’র নামাজের আলাদা ফযিলত ও মর্যাদা রয়েছে। জুমআ’র নামাজ সম্পর্কে হজরত সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `তোমরা জুমআর নামাজে উপস্থিত হও এবং ইমামের নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়াও। কেননা যে ব্যক্তি জুমআর নামাজে সবার পেছনে উপস্থিত হবে, জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সে সবার পিছনেই পড়ে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ)।
জুমার দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনের ফযিলত ও মর্তবা অনেক বেশি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্যোদয় হওয়ার সবগুলো দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হলো জুমআ`র দিন। এই জুমআ`র দিনেই হজরত আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন এবং জুমার দিনেই তাকে জান্নাত দান করেন এবং জুমার দিনেই তাকে জান্নাত থেকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন এবং কিয়ামতও এই জুমার দিনেই অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম)।
মূল কথা হচ্ছে, জুমার নামাজ মুসলিম উম্মার জন্য এক অতিশয় মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। বহু মুসলমানের একত্রিত হয়ে আল্লাহর সম্মুখে বিনীতভাবে সিজদায় অবনত হওয়ার এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য অধিকতর মজবুত করার জন্য এটি একটি সামষ্টিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমআ’র নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। চার শ্রেণির লোক হল- ক. ক্রীতদাস; খ. স্ত্রীলোক; গ. অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক; ঘ. মুসাফির এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)।
জুমআ`র নামাজ না পড়ার পরিণাম:
ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমআ বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।
খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমা ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক, নতুবা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাদের এই গোনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। অপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। (মুসলিম)।
গ. হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা এই রকম- যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমআ পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)। সুতরাং আমরা জামআ`র নামাজ পরিত্যাগ না করে সবার আগে আগে রমজানের শেষ জুমআ`র নামাজ তথা জুমাআতুল বিদা আদায় করতে মসজিদে উপস্থিত হব। মাফ চাইব আমাদের জীবনের সব ভুলভ্রান্তির জন্য।
সতর্কতা:
প্রাক ইসলামি যুগেও জুমাআ`র প্রচলন ছিল। তখনকার সময়ের লোকের জুমআ`র দিনকে ইয়াওমে আরুবা বলত। যা পালন করত ইহুদি, খ্রিস্টান তথা জাহেলি সম্প্রদায়ের লোকেরা। তারা জুমআ`র দিনে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, আমোদ-ফুর্তির আসর বসাত। এই ছিল তাদের জুমআ`র সংস্কৃতি। বর্তমানে আমাদের সমাজেও এ ধরনের প্রপাগাণ্ডা চালু হতে শুরু করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে এই ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক চাই।
শেষ কথা হল আমরা সারা রমজান যেখানে জুমআ পালন করেছি সেখানেই জুমআতুল বিদা পালন করার সুযোগ থাকলে ভালো। নতুবা এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে অবহেলা না করে যথাসময়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জুমআতুল বিদার নামাজ আদায় করে অফুরন্ত ছাওয়াব, রহমত, বরকত ও মাগফিরাত মাধ্যমে জাহান্নামের আগুণ থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করি। এবং জুমাতুল বিদার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করার প্রতি নিজে সতর্ক হই। পাশাপাশি অপর মুসলমান ভাই সচেতন হওয়ার সহায়তা করি। জুমাঅাতুল বিদা আমাদেরকে রমজান মাসের বিদায়ের ইঙ্গিতও দেয়। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত

আজহারীর পরবর্তী মাহফিল যে স্থানে

সিলেটে যাচ্ছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।আগামীকাল বৃহস্পতিবার আনজুমানে খেদমতে কুরআন আয়োজিত ৩৬তম তাফসিরুল ...