বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন লাখো পর্যটক। পর্যটকদের ভ্রমণকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে দিন-রাত কাজ করছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়ন।
পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে চলছে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের কার্যক্রম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, মহেশখালী, সেন্টার্মাটিন, চকরিয়র সাপারি পার্কসহ রয়েছে টুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম।
কক্সবাজার সড়কে বৃহস্পতিবার (২০অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে দেখা যায় ৭-৮টি মটর সাইকেল কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে শুরু করে কটেজ জোনসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যদের। দর্শনার্থীদের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
যশোর থেকে ঘুরতে এসেছেন রহিম উদ্দিন । তিনি বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রথমে কলাতলী ডলফিন চত্বরে নেমেছি। রুম খুঁজ করার জন্য অটোরিকশা জন্য যাওয়ার সময়, পুলিশ সদস্যরা আমাদের কক্সবাজার সম্পর্কে ধারণা ও পথ চিনিয়ে দিয়েছেন। তাদের এই আন্তরিকতায় আমরা খুশি।
টুরিস্ট পুলিশের কনস্টেবল সজিব বলেন, স্যার এখানে কিছু দালাল চক্র রয়েছে এবং কিছু কটেজ ঝুঁকিপূর্ণ। পরে রেন ভিউ রিসোর্ট দেখিয়ে দেন। তার এমন পর্রামশ দেখে নিজের নিরাপত্তা খুঁজে পাই। এই থেকে বুঝা যায় কক্সবাজারে টুরিস্ট পুলিশ খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন বলে এমন মন্তব্য করেন এই পর্যটক।
ঢাকা থেকে আসা তরুণী ইসরাত জাহান বলেন, সমুদ্র সৈকতে ইচ্ছামতো ঘুরলাম। কেউ কোনো বিরক্ত করেনি। পুলিশ না থাকলে বখাটেদের বিরক্তির শিকার হতে হতো। ট্যুরিস্ট পুলিশের কারণেই আমরা সুন্দর পরিবেশে বেড়াতে পারলাম। আগামী দিনে এখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসার ইচ্ছা বেড়ে গেল।
লাবনী পয়েন্ট এলাকার ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার সোহেল। তিনি বলেন,একটা সময় ছিল দর্শনার্থীরা হয়রানির শিকার হতেন কিছু অসাধু ফটোগ্রাফারদরর হাতে। ১০টি ছবি তুলার নামে ১শত ছবির দাম আদায় করতেন কিন্তু টুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় এখন নেই বললে চলে। টুরিস্ট পুলিশের এই অবিঝানের কারনে এখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন পুরাপুরি নিরাপদ।
কলাতলী মেরিনড্রাইভ হোটেল -রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ খুবই প্রশংসনীয়। তারা সব সময় পর্যটকদের খেয়াল রাখেন। আগে কক্সবাজার আসলে কলাতলী ডলফিন মোড়ে পাঁ রাখলে দালালদের কারনে বিরক্ত মনে করতো এবং অনেক সময় জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটতো। টুরিস্ট পুলিশের কারনে আজ প্রায় না বললে চলে।
তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া কোনো পর্যটক যদি তার স্বজন হারিয়ে ফেলেন, তাদের খোঁজার ক্ষেত্রেও পুলিশ সদস্যরা তৎপর। আগত পর্যটকদের মাযেদের জন্য বেস্ট ফ্রাডিং সেন্টারও স্থাপন করেছে টুরিস্ট পুলিশ। সব মিলিয়ে তাদের কার্যক্রমে এই এলাকার পর্যটনশিল্প নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আগে সন্ধ্যার পর বিচে (সমুদ্র সৈকত) যাওয়া যেত না। নিরাপদ মনে করতেন না পর্যটকরা। এখন সেই ভয় আর নেই। সবাই রাতে বিচে যান। সারারাত সেখানে কাটান। ২৪ ঘণ্টাই নিরাপদ বোধ করেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজারের বিচগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা সম্ভব হয়েছে। এ বাহিনীর দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তারা কক্সবাজারের অতিথিদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত প্রায় শতের উপরে দালাল আটক করে করে টুরিস্ট পুলিশ। সমুদ্র সৈকতে টহল দেওয়ার সময় আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট জোনের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) দেলোয়ার হোসেন ।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে অতীতে যে সংখ্যক বিদেশি ট্যুরিস্ট (পর্যটক) আসতেন, তার চেয়ে এখন অনেক বেশি আসেন। দেশীয় ট্যুরিস্টদের সংখ্যাও বেড়েছে। এটার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ইউনিটটি গঠনের আগে ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। যে কারণে অনেক সমস্যার সমাধান হতো না। এখন আমরা অপরাধ নিবারণ নয়, নির্মূলের চেষ্টা করি।
আগে সন্ধ্যার পর বখাটেদের উৎপাতে ট্যুরিস্টরা বিচে অবস্থান করতে পারতেন না। এখন সারারাত তারা বিচে থাকতে পারেন। কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ও সহায়তায় ২৪ ঘণ্টা সজাগ থাকি আমরা।
কক্সবাজারের প্রায় সব বিচেই ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা দায়িত্বপালন করছেন। এছাড়া ঝাউবন, সেন্টমার্টিন, টেকনাফের সব ট্যুরিস্ট স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন বিনোদন নিশ্চিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারে এমন কিছু স্পট আছে যেগুলো একটু ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন- সাংকৃতিক কেন্দ্র, সুগন্ধা বিচ। এখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন যারা ট্যুরিস্টদের ঠকানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের একটা আগ্রাসন তো আছে। বিচগুলোতে ভাসমান রোহিঙ্গারা চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায়। এ কারণে সুগন্ধা ও সাংকৃতিক কেন্দ্র বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
মূলত নিরবচ্ছিন্ন ও একান্তে সময় কাটাতে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসেন। তারা চান না কোনো ধরনের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ুক। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী আছেন, যারা তাদের (পর্যটক) মালামাল চুরি বা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। কেউ আবার প্রতারণাও করেন। ইভটিজিং কিংবা অটোচালকদের বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও আমাদের কাছে আসে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করি। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করি।