ফের আলোচনার কেন্দ্রে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য (এমপি) মিসেস রিফাত আমিনের ছেলে রাশেদ সরোয়ার রুমন। এবার তরুণীসহ ধরা পড়ে খেয়েছেন গণপিটুনি।
রবিবার রাতে এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ চারজনকে মারধর করে সংবাদের শিরোনাম হন রুমন। ওই রাতেই রুমন সাতক্ষীরার ভোমরায় নিজের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। সোমবার দুপুরে ফের দৃশ্যপটে রুমন।
জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি ফেলে রেখে রুমন রাতে এক তরুণীসহ শহরের মাগুরার বউ বাজারের পাশে বাঁশতলার সোনা চোরাচালানী মিলন পালের বাগান বাড়িতে আড্ডা দেয়। সকালে এ খবর জানাজানি হতেই গ্রামবাসী বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে উদ্ধারের সময় গণপিটুনির শিকার হয় এমপিপুত্র।
লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল হান্নান জানান, সকালে জানাজানি হয় যে রুমন এক তরুণীসহ তার এলাকার মিলন পালের বাগান বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। তার বন্ধু মিলন বর্তমানে সোনা চোরাচালান মামলায় জেলে আটক রয়েছে।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে সেখানে যেতেই দেখি কাটিয়া এলাকার বহু মানুষ। তারা রুমনকে খুঁজছেন। রুমন মারধরের ভয়ে রুমের ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেয়।
আবদুল হান্নান আরো জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশও সাধ্যমত চেষ্টা করে রুমনকে রুম থেকে বের করার। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন।
তিনি বলেন, এর কিছু সময় পর জেলা যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান সেখানে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তামিম আহমেদ সোহাগ ও যুবলীগ পৌর কমিটির আহবায়ক মনোয়ার হোসেন অনু।
তারা তাকে রুম থেকে বের করতেই শুরু হয়ে যায় এলোপাতাড়ি গণপিটুনি। গ্রামবাসী রুমনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এ সময় রুমন মাটিতে পড়ে যায়। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে আহত অবস্থায় মোটরসাইকেলে নিয়ে যান যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নান। অজ্ঞাত সেই তরুণীকেও নিয়ে যান তিনি।
গ্রামবাসী জানান, আবদুল মান্নান তাদেরকে চোখ রাঙিয়ে শাসিয়েছেন। এ ব্যাপারে কথা না বলতেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে জেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, রুমনকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। এখন সে কোথায় তা আমার জানা নেই। তবে মারধর একটু-আধটু হয়েছে বৈকি। তো এসব নিয়ে না লিখলে হয় না?
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, রবিবার রাতে যুবলীগ নেতা জুলফিকার রহমান উজ্জ্বলকে হত্যার উদ্দেশে মারধরের ঘটনায় রুমনকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য এসআই রফিক ও এএসআই পাইক দেলোয়ারকে পাঠানো হয় মাগুরা বাঁশতলার সেই মিলন পালের বাগানবাড়িতে। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
তামিম আহমেদ সোহাগ বলেন, ওর (রুমন) মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে। আমি সকাল পর্যন্ত ওর সম্পর্কে জানতাম। পরে সম্ভবতঃ সে ঢাকার দিকে চলে গেছে।
সাতক্ষীরা পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন অনু বলেন, আমরা রুমনকে উদ্ধার করেছি। এখন সে বাড়িতেই আছে। মারধরের কারণে রুমন অনেকটাই আহত।
এদিকে রুমন এক নারীকে নিয়ে তার বাড়িতে উঠেছে- এ খবর পেয়ে মিলন পালের স্ত্রী শম্পা রানী পাল সোমবার সকালে এসে তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার হুকুম দেন। কিন্তু রুমন তা শোনেনি। তিনি এসময় গ্রামের লোকজনকে বিষয়টি জানান।
শম্পা অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী মিলন পাল জেলে রয়েছেন। আমিও কিছুদিন বাবার বাড়িতে থাকছি। এই সুযোগে রুমন আমার বাড়িতে এসে ১৩টি গরু বিক্রি করে দিয়েছে যার দাম প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীকে জেল থেকে মুক্ত করার নামে নগদ ২০ লাখ টাকা নিয়েছে রুমন। আরো ১০ লাখ টাকা না হলে মিলনের প্রাইভেটকারটি দিয়ে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন রুমন।শম্পা জানান, রুমনকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে রুমনের এসব ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তার মা মিসেস রিফাত আমিন বলেন, রুমন সেখানে যাবে কেন? সেতো বাড়িতেই আছে। কারা তার সম্পর্কে এসব অপপ্রচার দেয় বলেন তো?
তিনি বলেন, সে তো উজ্জ্বলের সঙ্গে মারামারিও করেনি। মারামারি করেছে যুবলীগের মান্নান গ্রুপ আর উজ্জ্বল গ্রুপ। এ নিয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে আবার মামলা কিসের। তাছাড়া কারো বাগানবাড়িতে যাবার কথাও সত্য নয়। এ গুলো অপপ্রচার মাত্র।
পাঠকের মতামত