প্রকাশিত: ১৮/১২/২০১৬ ৮:০৮ এএম , আপডেট: ১৮/১২/২০১৬ ৮:০৯ এএম
ফাইল ছবি

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::

প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট থার্টিফাষ্ট নাইটকে সামনে রেখে মরন নেশা ইয়াবা পাচারে মরিয়া হয়ে উঠেছে।যদিও মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশের অত্যাচার নির্যাতন চলছে।এসময় সীমান্ত পেরিয়ে বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে।বিজিবিসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সীমান্তে বৃদ্ধি পেলেও থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় টেকনাফ ও উখিয়ায় ইয়াবা পাচার বেড়েছে ব্যাপক আকারে।এখানকার গডফাদাররা সর্বদা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে তাদের পাচার বানিজ্য ও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

গত নভেম্বর মাসে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অস্থিরতার মাঝেও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ২০ লাখেরও বেশী ইয়াবা জব্দ করেছে।যা অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি।এগুলো পাচারের সাথে জড়িত অন্তত অর্ধশতাধিক পাচারকারিকে আটক করেছে বিজিবি ও পুলিশ বাহিনী।জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটের মূল্য প্রায় ৬০ কোটির টাকা মত।ইয়াবা পাচার কাজে ব্যবহৃত নোয়া মাইক্রোবাস নামী দামি ব্রান্ডের প্রাইভেট কার,সিএনজি অটোরিক্সা,টমটম মোটর সাইকেল সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও জব্দ তালিকায় রয়েছে।তবে ইয়াবা পাচারের গডফাদাররা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাওয়ায় সাধারন অভিভাবক ও সচেতন লোকজন উদ্বিগ্ন।কারন সকলের জানা কারা কীভাবে গাড়ি বাড়ি অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে।টেকনাফ ও উখিয়ায় কয়েকশত ইয়াবা পাচারকারী চিহ্নিত ও বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত হলেও তাদের প্রায় সকলে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অদৃশ্য কারনে।চিন্থিত ইয়াবা গড়ফাদারদের সাথে থানা পুলিশের কিছু কিছু কর্মকর্তার সখ্যতারও অভিযোগ উঠেছে।সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই এদেশে ঢুকছে ইয়াবার চালান।প্রায় সময় ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটলেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি বরং প্রায় প্রতিদিনই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য।উখিয়া উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবা পাচারে নিয়োজিত হয়ে পড়েছে নারী পুরুষ,যুবক,যুবতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও।সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে এসব পাচারকারীরা কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় পড়েছে।ফলে থার্টি ফাস্ট নাইটকে সামনে রেখে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে ইয়াবা পাচার।শুধুমাত্র উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ টি ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে মানণঘাতী এ ইয়াবা ব্যবসায়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজের মাধ্যমে এসব সিন্ডিকেট বেপরোয়া ভাবে প্রসাশনের নাকের নগার উপর দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিক্তিতে গুটিকয়েক ইয়াবা উদ্ধারের ঘটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সিন্ডিকেটের গড়ফাদাররা। শুধুমাত্র ইয়াবা বাহককে আটকের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন তাদের দ্বায়িত্ব শেষ করায় এর সাথে জড়িত গড়ফাদার বা সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কোন তথ্য উদ্ধার করা যাচ্ছেনা বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।

সুত্রে জানা গেছে,উখিয়া সীমান্তের বালুখালী,শিয়াল্লাপাড়া,বেতবুনিয়া,দরগাবিল,ডেইলপাড়া ডিগিলিয়া,বরইতলী, রহমতের বিল,ধামনখালী সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবার চালান এসে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত স্থানে জমা হয়।পরবর্তিতে সিন্ডিকেট সদস্যরা এসব ইয়াবা সড়ক পথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে দেয়।অনুসন্ধানে জানা গেছে,দেশের আর্ন্তজাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেট এখন অস্ত্র ব্যবসার পরিবর্তে ইয়াবা ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।এ সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের নিয়ন্ত্রনে গড়ে উঠেছে উখিয়ার প্রায় ৫০ টি সিন্ডিকেট।চিন্তিত ইয়াবা গডফাদারদের নিয়ে গড়া এসব সিন্ডিকেট সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে অনেকেই এখন নব্য কোটিপতি।সিন্ডিকেটের তরুন সদস্যদের অধিকাংশই আবার দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা,প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে এ ব্যবসায় এসেছে।এসব তরুনদের অনুসরণ করে প্রায় প্রতিদিনই সিন্ডিকেটের বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। এসব চিন্থিত সিন্ডিকেটের মাঝে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বালুখালীর এনামুল হকের নেতৃত্ব বালুখালী সিন্ডিকেট, বিডিআর দোভাসী সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে ঘুমধুম সিন্ডিকেট,ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে জলপাইতলী সিন্ডিকেট,নুরুল আলম পুতিয়া,আবদুর রহমান ও আবদুর রহিমের নেতৃত্বে বালুখালী ঘোনারপাড়া সিন্ডিকেট,উত্তম ও ইসলামের নেতৃত্বে ঘিলাতলী সিন্ডিকেট,মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে হাজীরপাড়া সিন্ডিকেট, মিজানের নেতৃত্বে কুতুপালং সিন্ডিকেট, আতা উল্লা ও জালালের নেতৃত্বে সদর সিন্ডিকেট,বাবুলের নেতৃত্বে হিজলিয়া সিন্ডিকেট,আলী আহামদ, জাহাঙ্গীর আলম ও নুরুল আলমের নেতৃত্বে ভালুকিয়া সিন্ডিকেট,আকতারের নেতৃত্বে সিকদার বিল সিন্ডিকেট,আবদুল্লা,হারুন, রহমান ও লালুর নেতৃত্বে ডিগিলিয়া সিন্ডিকেট অন্যতম।এর বাইরেও সোনারপাড়া,থাইংখালী, জাদিমুরা,হলদিয়া পাতাবাড়ি,কুতুপালং সহ বিভিন্ন জায়গায় এলাকা ভিক্তিক সিন্ডিকেট করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চিন্থিত পাচারকারীচত্রু।

এদিকে উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বহিরাগত ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশের উপস্থিতিতে চলছে মাদক বেচাকেনা। এখানে মূলত বিদেশি মদ,হেরোইন,গাজা,ইয়াবা ও ফেনসিডিল বেচাকেনা হয়।সোনারপাড়া,কোটবাজার ও হ্নীলা থেকে বিকালের পর থেকে সারারাত কুতুপালং এলাকায় কয়েকশ মোটরসাইকেলে আসে উঠতি বয়সের যুবকরা।১৫ টি স্পটে দিনে-রাতে সমানভাবে গাঁজা,হেরোইন ও ইয়াবা ও মদ বিক্রি হয়।এর আশপাশে উপস্থিত থাকে ক্যাম্প পুলিশ।স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,এ ক্যাম্পসহ বহিরাগত বস্তির রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫০০ জনের বেশি লোক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।এ মাদক বেচাকেনার মধ্যে বেশিরভাগই নারী।মাদক অধিদফতরের কর্তা এবং কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশ তাদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পায় বলে নির্বি্েগ্নই চলে এ ব্যবসা।মাঝেমধ্যে কারও সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হলেই শুধু তাকে আটক করা হয়।পরে তাদের বেশিরভাগকেই আবার মোটা টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দেওয়া হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুতুপালং ক্যাম্পের একজন মাদক ব্যবসায়ী জানান,কুতুপালং ক্যাম্প এলাকায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বাংলা মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা। উখিয়া থানা ও ক্যম্প পুলিশকে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেয় তারা।বড় ব্যবসায়ীরা সাপ্তাহিক ১০০০ টাকা করে দেন।অন্যদিকে ছোট বিক্রেতারা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দেন।বড় ব্যবসায়ীরা সাপ্তাহিক ছাড়াও পুলিশকে খুশি রাখতে নানা উপলক্ষ্যে বাড়তি টাকা দেন।এরমধ্যে রয়েছে মাদক কিংবা নারী সরবরাহ।ফলে তাদের সঙ্গে পুলিশের ঝামেলা তেমন একটা হয় না। তবে খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে যারা ফাঁকি দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে টাকা দেয় না, তাদের সুযোগ পেলেই আটক করে পুলিশ। তখন ছাড়াতে গেলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়।এ ব্যাপারে উখিয়া টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবদুল মালেক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,পুলিশ সমসময় তৎপর রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে। কিন্ত সুনিদ্ধিষ্ট তথ্য ছাড়া ইয়াবা আটক করা কঠিন। এতে নিরপরাধ জনগনের হনরানির আশংকা। তবুও পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের বলেন, অনেকের সম্পর্কে অনেক কিছু শুনি ও জানতে পারি। কিন্তু এসব পাচারকারীদের মালামাল হাতেনাতে না পেলে কিছু করার থাকে না। টেকনাফ ২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল আবু জার আল জাহিদ জানান,নভেম্বর মাসে বিজিবি সদস্যরা প্রাায় ২০ লক্ষ পিস ইয়াবাসহ ২৫ জন পাচারকারীকে আটক করেছে।কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল ইমরান উলাহ সরকার জানান,অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা ইয়াবা পাচার ঠেকাতে সীমান্তে দিনরাত পরিশ্রম করছে।

সরওয়ার আলম শাহীন

উখিয়া কক্রবাজার

মোঃ-০১৮১৫-৪৯০৫০০/০১৮৩৯-২২২০০০

ই-মেইল – ংংযধযরহপড়ী@মসধরষ.পড়স

পাঠকের মতামত

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দেড় কোটি টাকার কক্সবাজারে সম্মেলন পরিকল্পনা নাকচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

টিবিএস:: চরম তারল্য সংকট সত্ত্বেও প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অ্যানুয়াল ...

সভাপতি- রশিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টমাটিন যাত্রী পরিবহন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন

সেন্টমাটিন যাত্রী পরিবহন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ...

আজহারীর পরবর্তী মাহফিল যে স্থানে

সিলেটে যাচ্ছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী।আগামীকাল বৃহস্পতিবার আনজুমানে খেদমতে কুরআন আয়োজিত ৩৬তম তাফসিরুল ...