প্রকাশিত: ১০/০৭/২০১৭ ৮:৫৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:৫৯ পিএম

জনকন্ঠ:: ঘড়ির কাটায় সময় তখন বেলা সোয়া ১১টা প্রায়। রাস্তার পাশের ডোবায় প্রায় অর্ধ ডুবন্ত বাসের ভেতর থেকে সাত মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে উঠে আসছেন এক পুলিশ সদস্য। তখনও কেউ এগিয়ে আসেনি উদ্ধার কাজে। বাসের যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে যেন নিজের জীবনই বাজি রাখলেন তিনি। বাঁচালেন প্রায় ৪০ জন যাত্রীর প্রাণ। গত শুক্রবার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এমনভাবেই মানবিকতার দারুণ এক নিদর্শন স্থাপন করলেন হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল মোঃ পারভেজ মিয়া।

কুমিল্লাসহ সারাদেশে এক প্রশংসিত নাম কনস্টেবল মোঃ পারভেজ মিয়া। তিনি আবারও তার কর্মদক্ষতার মধ্যদিয়ে প্রমাণ করেছেন- ‘সেবাই পুলিশের ধর্ম’। এতে পারভেজ মিয়া একাই প্রশংসিত হননি, পুরো পুলিশ প্রশাসনকেও প্রশংসিত করেছেন। তাকে সত্যিকারের বীর হিসেবেই দেখছে দেশবাসী। পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষ মনে যে খারাপ ধারণা পোষণ করেন, সেই ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন কনস্টেবল পারভেজ।

পারভেজ মিয়ার এসব খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তার ওইদিনের উদ্ধার অভিযানের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ভাইরালও হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ পারভেজের অসিম সাহসিকতার ছবি ও ভিডিও ফুটেজগুলো দ্রুত অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে থাকেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই একটি ডোবা। তাতে পচা পানি ও গা গুলিয়ে যাওয়া দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনায় পরিপূর্ণ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় ওই ডোবায়। চারপাশে চিৎকার। গাড়ির ভেতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও আত্মনাদ। কেউ ওই ডোবায় নামতে সাহসই পাচ্ছে না। এমন সময় হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ মিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার আগে ট্রাফিক সামলাতে ব্যস্ত ছিলেন পারভেজ মিয়া। হঠাৎ তিনি দেখতে পান অদূরেই সড়ক ঘেঁষা ডোবায় যাত্রী নিয়ে একটি বাস উল্টে পড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে ছুটে যান। এরপর নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে নেমে পড়েন পচা ও দুর্গন্ধে ভরা ডোবার পানিতে। ভেঙ্গে দেন ডোবায় পড়া বাসের সব কাঁচ। এর ফলে একে একে গাড়ির ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরা প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাঁচ ভেঙ্গে কনস্টেবল পারভেজ নিজে ঢুকে পড়েন গাড়ির ভিতরে। ডুব দিয়ে বের করে আনেন ৭ মাস বয়সী এক শিশুকে। এভাবে উদ্ধার করেন আরও অন্তত ২৫ জন নারী যাত্রীকে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেন।

মোঃ পারভেজ মিয়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম অঞ্চল হাইওয়ে দোহাজারী থানায় যোগদান করেন। পরে বদলি হয়ে গত ২ এপ্রিল ২০১৭ সালে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানায় যোগদান করেন। মোঃ পারভেজ মিয়া মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার হোসেনদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের বড় ছেলে, মাতা পারুল বেগম গৃহিণী, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। ছোট ভাই মহিউদ্দিন পড়াশোনা করছেন। ছোট দুই বোন মায়া মনি ও রতœা মনি সাংসারিক জীবন নিয়ে ভালই আছেন। মোঃ পারভেজ মিয়া এখনও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি।

তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এই মহৎ কাজ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন। পারভেজ মিয়া বলেন, আমি যেন ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করতে পারি ও সু-নামের সহিত সরকারী দায়িত্ব ও জনগণের নিরাপত্তা পালনের ভূমিকা রাখতে পারি, সে জন্য আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করি।

ঘটনা সম্পর্কে মোঃ পাভেজ মিয়া বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসেন। দেখেন বাসটি আস্তে আস্তে পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে। তখনই কোন দিক খেয়াল না করে নিজেই মানিব্যাগ মোবাইল অন্যের কাছে রেখে ডোবায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে কেউ উদ্ধার কাজে সহযোগিতা না করায় মোঃ পারভেজ মিয়ার এই সাহসিকতা দেখে স্থানীয়রাও উদ্ধার কাজে তৎপর হয়ে ওঠে। এরপর খবর পেয়ে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। সবার সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয় বাসটির সব যাত্রীকে।

পারভেজ মিয়ার এ সাহসিকতার জন্য পুলিশের উর্ধতন মহলের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পুরস্কৃতও করেছেন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন তাকে। এ খবর হাইওয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম জানতে পেরে পুলিশ কনস্টেবল মোঃ পারভেজ মিয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পদকের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে কুমিল্লা পুলিশ সুপারকেও সুপারিশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কনস্টেবল পারভেজ মিয়া যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না। যাতে করে ভবিষ্যতে বড় ধরনের

ভাল কাজ করতে পারে সেই লক্ষ্যেই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। দায়িত্ব-স্বীকৃতি পেলে আরও অনেক কিছুই করে দেখাতে পারবে কনস্টেবল পারভেজ।

পাঠকের মতামত

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানালেন অধ্যাপক দাউদ

মিশরের রাজধানী কায়রোতে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার ...

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রোডম্যাপ চাইলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মিয়ানমারে টেকসই স্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র দেখতে আগ্রহী বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশটিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ...