প্রকাশিত: ০৪/১০/২০১৬ ৭:৩৭ এএম

মাহাবুবুর রহমান : mahbubu-r-news-pic-04-1-300x180
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রথম বারের মত কক্সবাজার জেলা থেকে হকি নিয়ে রাজধানী ঢাকার মাঠে যাচ্ছেন কক্সবাজারের ছেলে-মেয়েরা। তাই তাদের উচ্ছাস যেন একটু ভিন্ন, আগামী ১৫ অক্টোবর ঢাকা প্রথম বিভাগ হকি দলে অংশ নিতে কক্সবাজার থেকে চূড়ান্তÍ হয়ে ঢাকা যাচ্ছেন ৫ জন হকি খেলোয়াড়। একই সাথে স্থানিয়ভাবে সফল প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাল পারফরমেন্স দেখিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা যাচ্ছে ৫ জন ছেলে এবং ৫ জন মেয়ে। খেলোয়াড়দের প্রত্যাশা জাতীয় হকি দলের হয়ে খেলা আর প্রথম বারের মত হকি খেলোয়াড় সৃষ্টি করতে পারায় দারুন খুশি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তবে এর পেছনের অবদান শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের শাহিনুল ইসলাম, শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির  ৯ম শ্রেণির ছাত্র। আগে কোন দিন হকিস্টিক হাতে না নিলেও এখন পুরুদস্ত হকি খেলোয়াড়। আগামী ১৫ অক্টোবর ঢাকা যাচ্ছেন জাতীয় হকি প্রথম বিভাগ লীগে অংশ নিতে। খেলবে ঢাকার যে কোন এক ক্লাব থেকে। তার কাছে জানলে চাইলে বলেন, কোন দিন স্বপ্নেও ভাবিনি হকি খেলোয়াড় হিসাবে কেউ আমাকে চিনবে, এখন স্কুল থেকে গ্রামের অনেকে আমাকে হকি খেলোয়াড় হিসাবে চিনে। গত বছর স্কুলের আয়োজনে ঢাকা থেকে কোচ এনে হকি প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছি তখন থেকেই হকিকে ভাললাগা। একই স্কুলের  ছাত্র পিএমখালী মাউজপাড়া গ্রামের কিশোর আবু বক্কর বলেন,  স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ ও খেলার পর আমরা পরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ২১ দিন ব্যাপী আবারো হকির প্রশিক্ষণ নিয়েছি, এখন হকি খেলা ছাড়া আর কিছুই ভাল লাগে না। এখন আমাদের ঢাকা থেকে ডাক এসেছে ভাবতেই ভাল লাগছে। কিছু দিন আগে টেলিভিশনের দেখেছি এশিয়া যুব হকি খেলায় বাংলাদেশ আর ভারতের ম্যাচ। আমার এখন স্বপ্ন এভাবে জাতীয় দলে খেলার। আশা করি আমরা পারবো। এর জন্য পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। একইভাবে তাদের সাথে ঢাকা প্রথম বিভাগে খেলার জন্য ডাক পেয়েছে বোরহান উদ্দিন, আমজাদ হোসেন, শাহেদ মোঃ লাদেন।
এদিকে কক্সবাজারে হকির ইতিহাসে  মেয়েদের প্রথম বারের মত অংশিদার হতে যাচ্ছেন বায়তুশ শরফ স্কুলের ৫ মেয়ে, এরমধ্যে একজন  শহরের পাহাড়তলী এলাকার কিশোরী আফরোজা আক্তার। ব্যবসায়ি পিতার ঘরে সবার ছোট আফরোজা কখনো হকি খেলা নিয়ে মাঠে আসবে চিন্তাই করেনি। তার মতে হকি খেলায় যখন স্কুলে নাম জমা দিয়েছি সবাই হাসাহাসি করেছে পরে যখন আমি ভাল খেলছি সবাই তালি দিচ্ছে দুটা দুই রকম অনুভ’তি। পরিবার থেকেও বাধা এসেছে হকি খেলা কেন? এটা ছেলেদের খেলা বা এতে ভবিষ্যত কি পড়া লেখায় মন দিতে চাপ দিয়েছেন। তবে আমি ঠিকই স্থির ছিলাম হকি খেলা নিয়ে। পড়ালেখার সাথে চালিয়ে যাই হকি খেলাও। পরে ডিএসএর দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণেও সফলতা পাই। এখন আরো উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা থেকে ডাক এসেছে। একইভাবে ডাক পেয়েছে তারই সহপাঠি মিসকাতুল জান্নাত ঈশিকা। গ্রামের বাড়ি খুটাখালী হলেও কোন জড়তা ছাড়াই হকির ড্রেস পড়ে নিয়মিত অনুশীলন করে সবার সাথে সেই এখন ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। পারিবারিক বাধা আগে থাকলেও এখন সবাই উৎসাহি বলে জানায় সে। এক প্রতিক্রিয়ায় সে বলে আমি যতটুকু জেনেছি আগে কোন দিন কক্সবাজার থেকে হকি টিম জেলার বাইরে যায় নি। এবারই প্রথম যাচ্ছে আর আগে কোন মেয়ে হকি খেলোয়াড় আসে নি। আমরাই প্রথম আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে প্রথম ইতিহাসের অংশিদার হতে পেরেছি। তাছাড়া হকি খেলা নিয়মিত করে একদিন জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা। এখন আমার ভেতর প্রবল আশা একদিন সেই স্বপ্নও পূরন হবে। একই দলে আছে অবসর প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে আফরা নাওয়ার নিঝুম। তার মতে, হকি খেলার জন্য তেমন কোন খরচ নেই বা তেমন বড় মাঠেরও প্রয়োজন নেই, চাইলে বাড়ির আঙ্গিনাতেই এটি চর্চা করা যায়। আর স্থানিয় ক্রীড়া সংস্থা যদি বছরে একবার প্রতিযোগিতামূলকভাবে হকি খেলার আয়োজন করে তাহলে আমাদের মত অনেক মেয়েই একদিন কক্সবাজার থেকে হকি খেলোয়াড় হিসাবে উঠে আসবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি একটি ভাল এবং জনপ্রিয় ক্রীড়া ইভেন্টের সাথে নিজেকে জড়াতে পেরে। আমার মতে, এখানে সফলতা পাওয়া খুব কষ্ট হবে না। একই মত দেন টেকপাড়ার আসিফুল করিম। তার মতে, হকি খেলা শিখা খুব কঠিন নয় এবং সহজেই এখানে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে।
জানা গেছে ঢাকাতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে উম্মে জান্নাতুল মাওয়া, ইশরাত আরা মজিদ, মোঃ আবদুল্লাহ, জিল্লুর রহমান, মারুফ হাসান, ঈসমাইল, আনোয়ার মোর্শেদ এরা সবাই বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির ছাত্র। এতেই বুঝা যায় পেছনের কারিগর বায়তুশ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এসএম সিরাজুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিম এবং ক্রীড়া শিক্ষক আবুল কাশেম কুতুবীর অবদান।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পরে এবারই প্রথম হকি নিয়ে কক্সবাজারের ছেলে মেয়েরা ঢাকা যাচ্ছে। এটা সত্যিই আমাদের জন্য গৌরবের।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনূপ বড়–য়া অপু বলেন, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার দেড় বছরে ৩ বার হকি প্রশিক্ষণ করিয়েছি, তারই সফলতা আজকে ১৫ হকি খেলোয়াড় ঢাকা যাচ্ছেন। আরো খুশির কথা এরমধ্যে ৫ জন মেয়ে আমি বিশ্বাস করি এরাই একদিন জাতীয় দলে খেলবে এবং কক্সবাজারের সুনাম বয়ে আনবে। ১৯৮৪ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থা গঠনের পর  প্রথম বারের মত হকি দল গঠন করতে পেরে খুবই আনন্দিত। একই সাথে আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে খেলাধুলা নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। দৈনিক  কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবসময় উদারতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ: যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যায় উদারতা দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত বিফ্রিংয়ে এ মন্তব্য করেছেন মুখপাত্র ...

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আসছে বাংলাদেশে, প্রদর্শনী হতে পারে কক্সবাজারে

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগামী আসর বসার কথা পাকিস্তানে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেই টুর্নামেন্টের পর্দা উঠবে। তবে মূল ...