প্রকাশিত: ০৩/০৯/২০১৭ ১১:১০ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০৮ পিএম
ফাইল ছবি

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসতবাড়ি লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার তিন দফায় আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রতিবাদ জানানোর এক দিনের মাথায় সীমান্তে এ ঘটনা ঘটল।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও কক্সবাজারের ঘুমধুম সীমান্তে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি।

গুলিবর্ষণের পরপরই কক্সবাজারের ঘুমধুম এবং বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।

সূত্রের দাবি, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির তুমব্রু ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি গুলি তুমব্রুর উত্তরপাড়ার আবদুল করিম সওদাগরের টিনের চাল ভেদ করে ঘরে পড়ে।

তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু স্থানীয় বাজার ও আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, তুমব্রু বাজারে গুলি এসে পড়ায় স্থানীয়রা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকটি গুলি উদ্ধার করে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে জমা দিয়েছি।’

ঘুমধুম এলাকার আবদুর রহিমও একই কথা জানান। পরে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এ বিষয়ে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সন্ধ্যায় তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েক রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে আমাদের ক্যাম্পে দিয়ে গেছে। পরে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।’

গুলির ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবি কড়া অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান মঞ্জুরুল হাসান।

এদিকে রোববার সকাল থেকেই তুমব্রুর ঘুমধুম সংলগ্ন ওপারের ঢেকুবনিয়ার গ্রামগুলো থেকে আগুনের ভয়াবহ কুণ্ডলি দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

এ ঘটনায় আরও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা রোববার প্রাণভয়ে সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান নিয়েছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সংস্থাটির ভাষ্যে, গত ২৪ আগস্ট সংঘাত শুরুর পর থেকে সবমিলে প্রায় ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ স্টেশন ও একটি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।

এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার গানশিপের ব্যাপক ব্যবহার করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এতে মিয়ানমার সরকারের হিসাবে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত শত শত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে এসেছেন।

অবশ্য চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বর্মি সেনাদের গণহত্যার বদলা নিতেই রোহিঙ্গা স্বাধীনতাকামীরা পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে।

গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর এমনই এক হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়।

কফি আনানের প্রতিবেদনের কয়েক ঘণ্টা পরই রোহিঙ্গাদের গ্রামে গণহত্যা শুরু করে বর্মি সেনারা।

সংঘর্ষের পর স্রোতের বেগে সীমান্তে আসছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত। এসব এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তারা রাতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। সুত্র : পরিবর্তন

পাঠকের মতামত