প্রকাশিত: ০৯/০৫/২০১৭ ১:১০ পিএম , আপডেট: ০৯/০৫/২০১৭ ১:২১ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
পাহাড়ে অহরহ ঢুকছে অস্ত্রের চালান। বাংলাদেশ-মিয়ানমার ও বাংলাদেশ-মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আসছে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রুট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। গহীন অরণ্যে রয়েছে অস্ত্র ভাণ্ডার। দুর্গম হওয়ায় ওইসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিতে পারে না। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে অস্ত্র পাচারকারীরা।

মিজোরাম সীমান্ত ঘেঁষেই রয়েছে একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী দলের প্রধান কার্যালয়। অনায়াসেই তারা বাংলাদেশ-ভারতে যাতায়াত করছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকেও অস্ত্র আসছে। সন্ত্রাসীরা পার্বত্য অঞ্চলের ভাবনা কেন্দ্রের ভান্তে পরিচয় দিয়ে ছোট অস্ত্র আনছে। গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে জেনেছে, তারা বাংলাদেশি নয়। বাংলাদেশের পরিচয়পত্র তাদের হাতে নেই। এসব অস্ত্র পাহাড়ের তিনটি সন্ত্রাসী সংগঠন, জঙ্গি ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে যাচ্ছে। গহীন অরণ্যে রয়েছে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

গোয়েন্দা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভান্তে পরিচয় দানকারী কয়েকজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে। তারা স্বীকার করেছে, মিজোরাম সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাহাড়ি তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড এনে মজুদ করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরাকান আর্মির বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। বর্তমানে তাদের অবস্থান মিয়ানমার আর্মিদের বিরুদ্ধে। মূলত তারা বাংলাদেশে অস্ত্রের ব্যবসা করছে। পাহাড়ি তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপের অনেকেই আরাকান আর্মির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

ইমন। পাহাড়ি ছেলে। মা মারা গেছেন। বাবা এবং দুইবোনের সঙ্গে থাকতেন। ২০১১ সালে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে যান। আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়ে ৪ মাসের একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সঙ্গে আরো অনেকেই ছিলেন। রনি নামের একজন তাদের প্রশিক্ষণের নেতৃত্ব দেন। থানচি সীমান্ত এলাকায় তাদের পদায়ন হয়। সে সময় তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন পার্বত্য অঞ্চলে মূলত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে অস্ত্র আসে। এক পর্যায়ে ইমনও জড়িয়ে পড়েন অস্ত্র পাচারে।

তিনি ঢাকার এক অধ্যাপকের কাছে ১৫টি একে-৪৭ বিক্রি করেছেন বলে জানান। এছাড়া জঙ্গিদের কাছে ৩০টি একে-২২ বিক্রি করেছেন। মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন ওনসব পয়েন্ট এলাকায় নেই কোন রাস্তাঘাট। নেই বিজিবির কোন ক্যাম্প। এই অবস্থায় নিরাপদে ওইসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আনছে নিত্যদিন।

অস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আনা হয়। ২০১২-১৪ এই দুই বছর ইমন অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পর্যাপ্ত টাকা আয় করেন। পরে চালানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তার হাতে আরাকান আর্মির ট্যাগ লাগানো ছিল।

এদিকে পাহাড় থেকে এসব অস্ত্র সমতলেও চলে আসছে। কুরিয়ার সার্ভিসে করে অস্ত্র চালান করে সন্ত্রাসীরা। কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে চেক ও স্ক্যান না হওয়ার সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ১৪টি শাখায় বিষয়টি জানিয়েছেন।

অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ গড়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করছে। চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধের মাধ্যমে পাহাড় অশান্ত করতে এ ধরনের অপতত্পরতা চলছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, পাহাড়ি এলাকায় অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র। তারা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে নানাভাবে সংগঠিত হতেও সহায়তা করছে।

গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি পাহাড়ি এলাকা দুর্গম হওয়ায় ওই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এখনো অরক্ষিত। বিভিন্ন নামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে সেখানে। তাদের নানাভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল। এসব সংগঠন ছাড়া দেশীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপও পাহাড়ে অশান্তির আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৬৯ কিলোমিটার অরক্ষিত পাহাড়ি এলাকা ওই অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, পার্বত্য অঞ্চল থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অস্ত্র পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। সুনিদিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেলেই অভিযুক্ত কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র প্রবেশের বিষয়টিও তদারকি করা হচ্ছে।

র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে খবর পেয়ে সস্ত্রাসীদের কাছ থেকে ৬টি ভারি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে আমাদের টিম কাজ করছে। বিষয়টি আমরা মনিটর করছি।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মিজোরাম সীমান্ত সন্ত্রাসীদের হেড কোয়ার্টার। গহীন হওয়ায় ওইসব এলাকায় বিজিবি টহল দিতে পারছে না। সন্ত্রাসীরা মিজোরামে বসে মনিটর করে। তাদের উদ্দেশ্যে ‘জুমল্যান্ড’ গঠন। নিজেদের মতো করে শাসন করতে অস্ত্র মজুদ করছে। গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। অস্ত্রের মজুদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃতরা এসব তথ্য জানান। সুত্র ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে শান্তি স্থায়ী হবে না

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও ...

পারকি সৈকতে ধরা ২৫ ভাসানচর থেকে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা!

নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবির থেকে কৌশলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছেন! প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাওয়ার বাহানা, ...

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলন

জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্তৃক কটাক্ষ ও ব্যাঙ্গাত্মক কন্টেন্ট বানিয়ে অপপ্রচার ...