উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭/০৯/২০২৩ ৮:০০ এএম

সুজাউদ্দিন রুবেল ::
বিশে^র সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অবস্থান কক্সবাজার। এখানে রয়েছে পাহাড়, প্রকৃতি, দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আর রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অসংখ্য পর্যটন স্পট। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভরপুর হলেও বিদেশি পর্যটক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রচার-প্রচারণা, পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো ও পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
তবে প্রশাসন বলছে, নানা উপায়ে পর্যটনখাতের প্রচার এবং বিদেশিদের আকৃষ্ট করা যায় এমন সুবিধা নিশ্চিত করেই এই খাতের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।
বাংলাদেশের পর্যটনখাতের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাটি কক্সবাজার। প্রতিবছর ভ্রমণপ্রিয় লাখ লাখ মানুষের সমাগম সৈকত শহর কক্সবাজারে। সাগর সৈকতে প্রত্যেকেই নিজের মতো করে অবসর সময়টুকু উপভোগ করেন। কিন্তু কক্সবাজারে দেখা যায় বেশিরভাগই দেশিয় পর্যটক।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ঘুরতে এসেছেন নব-বিবাহিত টিপু সুলতান-নাদিয়া আকতার দম্পতি। বেড়াতে এসে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়েই বলছিলেন, বিদেশি পর্যটকরা কেন কম এবং তাদের আকৃষ্ট করতে কি করা দরকার।
টিপু সুলতান বলেন, পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো। আমাদের সুন্দর একটা বিচ আছে, বিচের মধ্যেই বসে আছি এরপর রাতে রুমে বসে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে আর কিছুই নেই।
সাদিয়া আকতার বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। বিদেশিরা একটু খোলামেলা পোশাক পরতে পছন্দ করে। আমাদের ছেলে এমনকি মেয়েরাও তাদের দেখলে সবাই আজগুবিভাবে তাকিয়ে থাকে। এছাড়া একটা বড় সমস্যা হলো যে, আমি গোসল করছি বা হাঁটছি কেউ তাকাচ্ছে বা ছবি তুলছে, ভিডিও করছে এতেও অস্বস্তি লাগে। এরপাশাপাশি তো হকার এবং ভিক্ষুকের উৎপাত তো রয়েছে।
নিয়মিত দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেন এমন পর্যটকরা বলছেন, শুধু উন্নতমানের থাকা-খাওয়া এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকাটাই যথেষ্ট নয়।
সৈকতে বেড়াতে আসা মো. আবু হানিফ বলেন, বিদেশিরা হয়তো পত্রিকা বা টিভিতে কক্সবাজার সম্পর্কে একটা আইডিয়া নেয়। কিন্তু যখন বিদেশিরা এসে সরাসরি কক্সবাজার দেখবে, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবে, খাবার দাবার গ্রহণ করবে তখনই বাংলাদেশের একটা বাস্তব চিত্র তৈরি হবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে জড়িত আবু তালেব শাহ। দায়িত্বপালন করেছেন বেশ কয়েকটি তারকামানের হোটেলে। তিনি জানালেন, শুধু উন্নতমানের থাকা-খাওয়া থাকাটায় যথেষ্ট নয়। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি নানামুখী উদ্যোগ আর বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা।
হোটেল কক্স-টুডে’র ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, বিদেশি পর্যটকরা দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে দেখলো রাতের বেলায় কী করবে। নাইট লাইফ নাই এখানে। কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ইতিবাচক প্রচার দরকার। একই সঙ্গে বিদেশি ট্যুর অপারেটরদের এনে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোর সঙ্গে পরিচিতি করে দেয়া এবং নানাবিধ প্রচারণা চালানো।
এদিকে এরই মধ্যে কক্সবাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। এদিকে নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে, অন্যদিকে যুক্ত হচ্ছে রেল সংযোগেও। দুটিই চালু হচ্ছে চলতি বছরে।
প্রশাসন বলছে, নানা উপায়ে পর্যটনখাতের প্রচার এবং বিদেশিদের আকৃষ্ট করা যায় এমন সুবিধা নিশ্চিত করেই এই খাতের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, টেকনাফের সাবরাং-এ এক্সক্লুসিভ ইকো ট্যুরিজম পার্ক হচ্ছে। সেটা বিদেশি পর্যটকদেরকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া সেন্টমার্টিনও আছে। কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো অনেক সুন্দর, আমরা চেষ্টা করছি ব্যবস্থাপনাটা সুন্দর করার। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ট্রেন চলাচল ও সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক হয়ে গেলে পুরো চেহারায় বদলে যাবে। কক্সবাজারে আরো অনেক অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে পাশাপাশি পর্যটক আকর্ষণের সক্ষমতাও বাড়ছে।
মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সৈকতে দিনের বেলা পর্যটক আসছে, দেখছে, গোসল করছে ও ঘুরছে। কিন্তু রাতের বেলার কোনো আয়োজন নেই। রাত্রিকালিন বিনোদনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যেমন রাতের বেলা সিনেমা দেখার একটা বিষয় থাকতে পারে বা বিদেশিরা যা যা চান আলাদা কিছু, যা হয়তো আমাদের সংস্কৃতির সাথে অনেকসময় মিলে না। তারপরও সেগুলো আমরা চেষ্টা করছি বিদেশিদের মনযোগ কি করে করা যায়।
মো. ইয়ামিন হোসেন আরো বলেন, বিদেশের অনেক দেশ পর্যটন নিয়ে অনেক বড় একটা অর্থ যেটা জিডিপিতে যুক্ত করে। কিন্তু সে অংশ আমাদের অনেক কম। বিদেশিদের টার্গেট করে কাজ করছি আমরা। তাদের কি চাওয়া আছে আমরা জানি মোটামুটি। বিশেষ করে, রাতের বিনোদনের সঙ্গে নিরাপত্তা দরকার। সেগুলো আমরা চেষ্টা করছি যুক্ত করার। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা তৈরি হবে এবং বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যার কমোডর মো. নুরুল আবছার বলেন, কক্সবাজার ভ্রমণে আসা সবই দেশিয় পর্যটক। বিদেশি পর্যটক আগমন হাতেগোনা। যদি বিদেশি পর্যটক না আসে তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে না। তাই বিদেশি পর্যটকদের নিশ্চয়তা দিতে হবে তারা কক্সবাজার এসে পর্যাপ্ত বিনোদনের সুবিধা পাবে। এসব কথাকে মাথায় রেখে আমরা কিন্তু ৩০টি প্রজেক্ট নিয়েছি। অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে যা বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের সহায়ক হবে। যেখানে বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী বিনোদনের সুবিধাগুলো থাকবে। আবার একইভাবে হালাল টুরিজমের জন্য নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাও হবে। এসব পরিকল্পনা হচ্ছে।
কমোডর মো. নুরুল আবছার বলেন, বিদেশিদের জন্য টেকনাফ উপজেলার সাবরাংয়ে সাড়ে ১১শো একর জমিতে বিশেষ ট্যুরিস্ট জোন করা হচ্ছে যেখানে বিদেশিদের যাবতীয় সুবিধাদি যেটা ভিয়েতনামের হা লং বে কিংবা মালয়েশিয়ার গ্যাংটক থাইল্যান্ডের মতো সুবিধাদি নিশ্চিত করা হবে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত