পেকুয়া প্রতিনিধি::
বিগত ভয়াবহ বন্যায় বর্তমান সরকার বিশেষ বরাদ্ধ দিয়ে মগনামার কাঁকপাড়া বেড়িবাঁধ অংশে কাজের জন্য টাকা ছাড় দেয়। সে থেকে অদ্যবধি ঠিকাদার কাজ না করে অরক্ষিতই রেখে দিয়েছে। যার কারণে বিগত বর্ষা মৌসুমের মত এবারেও সাগরের পানিতে ভাসতে হবে আমাদের। সরকার আমাদের জন্য অনেক করেছেন, তাই আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ঠিকাদারের অবহেলার কারণে হয়তো আমরা চরম দুর্ভোগ পোহাতে যাচ্ছি। জরুরী (ইমার্জেন্সি) বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার বরাদ্দ প্রদান করলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ বাস্তবায়ন না করায় আমাদের এই করুণ দশা। এখন শুনতেছি ঠিকাদার লাপাত্তা। কথাগুলো বলছিলেন পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা কাঁকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মাঝি।
একই এলাকার বদি আলম সওদাগর, মোজাফ্ফর আহমদ, শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তাফাসহ আরো বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বর্তমানে এ এলাকার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোন সময়ে তা ভেঙ্গ পড়তে পারে। এতে এই এলাকার একমাত্র ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবণসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতঘর সাগর বক্ষে চলে যেতেও পারে। উপজেলার উপকূলীয় এলাকাসমূহে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চললেও মগনামা ইউনিয়নের সবচেয়ে দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা এ এলাকায় তা হচ্ছেনা।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আক্রমনে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে ইউনিয়নের ২০হাজার মানুষ প্লাবিত হয়েছিল। জোয়ার ভাটায় পরিণত হয়েছিল পুরো মগনামা। পরে চিংড়ি ঘের মালিক ও আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮লাখ টাকা ব্যয়ে রিং বাঁধের মাধ্যেমে টেকানো হয়েছিল জোয়ারের পানি। কিন্তু ১০/১৫ফিটের ওই ছোট বাঁধ আগামী বর্ষা মৌসুমের কতদিনইবা ঠিকবে তা বলা মুশকিল। তাই আমি চাই মগনামা ইউনিয়নের মানুষের জানমাল রক্ষার্থে অতি দ্রুতই জরুরীভাবে বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে রিং বাঁধটি আরো শক্তিশালী করা হোক। যাতে অন্তত আগামী বর্ষা মৌসুমে মগনামাবাসীকে জোয়ার ভাটার সাথে যুদ্ধ করতে না হয়।
জানা গেছে, বিগত ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে মগনামা পুরো এলাকায় বেড়িবাধ বিধ্বস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁকপাড়া অংশে। সরকারী উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা দফা দফায় কাঁকপাড়া অংশ পরিদর্শন শেষে সরকার থেকে জরুরী বরাদ্ধ হিসাবে ৩৫লাখ টাকার বরাদ্ধ দেয়। নিয়োগপ্রাপ্ত হন রুহুল কাদের মানিক নামের ঠিকাদার। প্রাথমিক কাজ শুরু করে ওই টাকা উত্তোলন করে ফেলেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তারপর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান ঠিকাদার রুহুল কাদের মানিক। বন্ধ রয়েছে কাঁকপাড়া অংশের বেড়িবাধ সংস্কার কাজও। এরই মাঝে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় কয়েকজনের নিজস্ব আর্থিক সহয়তায় ওই অংশে একটি বাঁধ দেন।
বিগত কয়েকমাস আগে জেলা প্রশাসক মগনামাস্থ বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে এসে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রদেক্ষপ নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন প্রদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, আসলে আমার আগের ইউএনও’র সময় বরাদ্ধটা দেয়া হয়েছিল। যার কারণে এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানিনা। তারপরও উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়ার বেড়িবাঁধের দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জানান, বিশেষ বরাদ্ধের দেয়া টাকায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ না করায় এটার কার্যাদেশ বাতিল করা হচ্ছে। নতুনভাবে ওই জায়গার জন্য বরাদ্ধ দিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।