কক্সবাজার শহরে বসবাসকারি সুশিল সমাজের একজন প্রতিনিধি গতকাল বুধবার উখিয়ার ঐতিহ্যবাহি মরিচ্যা গরু বাজার গিয়েছিলেন। ভদ্র লোকের ইচ্ছা ছিল-একটি বলদ গরু কিনবেন। বর্ষা শেষের হাল দেয়া বলদ দামে সস্তা হয়। বলদগুলোকে নিয়ে হাল দেয়ার কারনে সংগত কারনেই এসব একটু বুড়িয়ে যায়। আবার এগুলো স্বাস্থ্যহানি অবস্থায়ও থাকে। অনেকে এসব বলদগুলোকে কিনতে চান না। বাস্তবে এসব বলদই স্বাস্থ্যকর।
অথচ গরু বাজারের জন্য বিখ্যাত মরিচ্যায় গতকাল পুরোদিন হাটাহাটি করেও পাওয়া গেল না এরকম একটি বলদ। এমনকি কম দামের পাতলা দেহের (স্থানীয় ভাষায় লেড়া গরু) কোন গরুরই বাজারটিতে দেখা মিলেনি। মরিচ্যা বাজারটি যুগ যুগ ধরে গরু কেনা বেচার জন্য একটি বিখ্যাত বাজার। এক কালে হরেক রকমের গরুর মেলা বসত বাজারটিতে। প্রচুর সংখ্যক মিয়ানমারের গরুও বাজারে থাকত। জেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন কোরবানের বাজারে ভীড় জমাতেন।
তবুও ভদ্রলোক যেন শখ করেই খুঁজতে গিয়েছিলেন বাজারটিতে একটি হাল দেয়া বলদের (লেড়া গরু)। কিন্তু হায় ! সারাদিনেও দেখা মিলেনি একটি লেড়া গরুর। তিনি (ভদ্রলোক) জানালেন, এক সময় এই লেড়া গরুগুলো দামে যেমন সস্তা ছিল তেমনি গরুগুলোর মাংশও ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু। দেখতে লেড়া (হালকা-পাতলা) দেখালেও বাস্তবে এসব গরু গুলোই ছিল এলাকার ভাল পরিবারের কোরবানের অংশ।
গতকাল মরিচ্যা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের দক্ষিনে মুক্তিযোদ্ধা হাই স্কুল থেকে শুরু করে দক্ষিনের কিয়দংশ পর্যন্ত মহাসড়ক জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে গরু বাজার। এই বাজারে শত শত নয় একেবারে সহ¯্রাধিক গরু উঠে কোরবান উপলক্ষে। এসবে কোথাও পাওয়া গেল না একটি লেড়া গরুর দেখা। বাজারে উঠা গরুর মধ্যে শতকরা আশি ভাগই ছোট সাইজের গরু। এসব ছোট সাইজের গরুর ওজন দেড় মণ থেকে তিন মণ পর্যন্ত। সবগুলো গরুই পুষ্টিতে ভরা। কোনটিই স্বাস্থ্যহানি বা লেড়া গরু নয়। দামও অস্বাভাবিক। একটি দুই মণ ওজনের গরুর দাম গেল বছর যেখানে ছিল ত্রিশ হাজার টাকা সেটির দাম এবার দশ হাজার বাড়িয়ে হাঁকা হয় চল্লিশ হাজার টাকা।
বাজারটিতে দিনব্যাপি ছুটাছুটির পরেও একটি লেড়া গরু না পাওয়ায় অনেকেই বিষয়টিকে অত্যন্ত পজেটিভ বলেছেন। বাজারে আলাপে লোকজন বলেন-গ্রামের মানুষ এখন অনেক সচেতন। গবাদি পশুর যতœ নেয় তারা। দেশে মোটাতাজা করণ কর্মসুচি শুরু হয়েছে। তাই লেড়া গরুর দেখা মিলছে না। একজন দুষ্টুমির সুরেও বললেন-পুরো দেশইতো এখন পুষ্টিকর। তাই আমাদের গরু বাজারও পুষ্টিতে ভরে গেছে। বাস্তবে কি রকম পুষ্টিতে ভরা সেটাই সন্দেহে ভরা।
সুতরাং আরো ব্যাপকভাবে জানার চেষ্টা করে যা জানা গেল-তা হচ্ছে গরুর গোয়ালে তালা লাগানো থাকে এখন। তবে সেই তালা গরু চোর ঠেকাতে নয়। বাস্তবে গোয়ালে বাঁধা গরুর খাদ্য যাতে কেউ দেখতে না পায় সেজন্যই গোয়াল তালাবদ্ধ রাখা হয়। লোকজনের চোখের আড়াল করে যে খাবার গরুকে খাওয়ানো হয় তাতে গরু মাত্র ক’দিনেই মোটা হয়ে যায়। মোটা হতে হতে মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়ে। গরুর চামড়া চিক চিক করে। সুতরাং বাজারে আর লেড়া গরুর দেখা মিলবে কিভাবে ? তবুও একটি লেড়া গরুর সন্ধান আমার অব্যাহত থাকবে আসন্ন কোরবান পর্যন্ত সময়ে। লেখক-তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজারে কর্মরত দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার।