মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান ও সংঘাতের ফলে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। এতে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সীমান্ত এলাকায়। টানা সংঘর্ষের ফলে কৌশলে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এসব অনুপ্রবেশকারীর বেশির ভাগই আশ্রয় নিচ্ছে উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত আশ্রয় শিবিরগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে হাজারো রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।
এ ছাড়া গত কয়েক মাসে আরও প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এদিকে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয়দের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনিরাপদ হয়ে উঠেছে উখিয়া-টেকনাফের জনপদ। এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত খুন, গুম, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের বলিবাজার ও সাপবাজার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এদের দ্রুত থামাতে হবে, যাতে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে না হয়।
উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে আরও হাজারো রোহিঙ্গা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে তারা প্রবেশের চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার এশারা বেগম, সাদেক হোসেন, কিশোর মো. তাহের, শিশু মো. শরীফ, বিবি আয়েশা ও বিবি জান্নাত পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফের অভিযান শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা শান্ত। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণের কথা জেনে তারা বাংলাদেশে চলে আসছেন। কারণ রাখাইনে নির্যাতনের মাত্রা কমলেও রোহিঙ্গাদের কোনো কাজে বের হতে দিচ্ছে না দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা রোহিঙ্গারা তাই বাংলাদেশে ছুটছে।
পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী ক্যাম্পের একজন মাঝি জানান, কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। বিষয়টি ক্যাম্প ইনচার্জকে জানানো হয়েছে। তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১-এর মাঝি আলী হোসেন বলেন, গত এক মাসে শুধু আমাদের ক্যাম্পে অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে এসেছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে সংঘর্ষ চলছে, তাতে বাড়িঘরে থাকতে না পেরে এসব রোহিঙ্গা পালিয়ে আসছে। পাশাপাশি আসার অপেক্ষায় সীমান্তে অবস্থান করছে আরও অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি, বিষয়টি দেখছি।
পাঠকের মতামত