নিউজ ডেস্ক::
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামে দাফন করা হয়েছে।শনিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।এর আগে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। সেখানে স্ত্রী,দুই মেয়ে,দুই বধূসহ পরিবারের চল্লিশ সদস্য মীর কাসেম আলীর লাশ দেখার সুযোগ পান।
পরে স্থানীয় বাহমাদিয়া সুলতানিয়া শামসুল উলুম হাফেজিয়া ও এতিম খানা মাদ্রাসার হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাদের মীর কাসেম আলীর নামাজে জানাজা পড়ান। এতে পরিবারের ৩৮ জন সদস্য, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া কেউই শরিক হওয়ার সুযোগ পাননি।
জানাজা শেষে মীর কাসেমের কেনা প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন দোতলা মসজিদের উত্তর পাশের জমিতে তাকে সমাহিত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে রাত সাড়ে তিনটায় দাফন সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাশিমপুর কারাগারে রাত সাড়ে ১০টায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপর রাত ১২টা ৩২ মিনিটে তার লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয়া হয়।
মীর কাসেমের ফাঁসির আগেই কারাগারের মূল ফটকের সামনে আসে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। এর একটিতে ছিল কফিন। পরে রাত ১২ টা ৩২ মিনিটে একটি অ্যাম্বুলেন্স কারাগারের ভেতর থেকে মীর কাসেমের লাশ নিয়ে বেরিয়ে আসে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহাড়ার মধ্য দিয়ে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের সামনে বিজিবি, পুলিশ এবং র্যাবের ছয়টি গাড়ি এবং পেছনে পুলিশের তিনটি গাড়ি ছিল। ওই বহরে ছিলেন একজন ডেপুটি জেলার। তার নেতৃত্বে কঠোর নিরাপত্তায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
মীর কাসেমের লাশবাহী গাড়ি বহর আশুলিয়া, নবীনগর, ধামরাই, সাটুরিয়া হয়ে মানিকগঞ্জের শহরের ওপর দিয়ে হরিরামপুর চালা গ্রামে পৌঁছায়।
এদিকে শনিবার বিকাল থেকেই সরকারী দলীয় বেশ কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী চালা গ্রামের কাছে জড়ো হয়। তারা রাত ১০টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে তারা এলাকা ত্যাগ করেন।
রাত ১১টার পরে মানিকগঞ্জ থেকে হরিরামপুর সড়কে প্রায় সব ধরনের যানচলাচল সম্পুর্ন বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চালা গ্রামের মসজিদের পাশে মীর কাসেমের কবর খোঁড়া হয়। পাশ্ববর্তী সাকুচিয়া গ্রামের সত্তর বছর বয়স্ক সামেজ উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে পাঁচ জন লোক কবর খোঁড়েন।
এদিকে কাশিমপুর কারাগারে জীবিত মীর কাসেম আলীর সাথে শেষ দেখা করে তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুনের নেতৃত্বে দুই মেয়ে, দুইপুত্র বধূসহ পরিবারের নিকটতম ৪০ সদস্য চালা গ্রামে চলে আসেন।
তারা পাঁচটি মাইক্রোবাসে করে কাশিমপুর থেকে রওনা দেন। পথে হরিরামপুরের কলতা বাজার এলাকায় তাদের বহরের গাড়িগুলো আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিন।
এ সময় তাদের জানানো হয়, চালাগ্রামে তিনটি গাড়ি যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। পরে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী আয়েশা খাতুনের বিশেষ অনুরোধে একটি বাদে চারটি গাড়িতে করে ওই চল্লিশ জন সদস্য রাত ১১টার দিকে চালা গ্রামে পৌছায়।
পরে রাত পৌনে তিনটার দিকে লাশ চালা গ্রামে পৌঁছায়। সেখানে মীর কাসেমের পরিবারের ৪০ সদস্যের জন্য লাশ উম্মুক্ত করা হয়। সোয়া তিনটায় পরিবারের ত্রিশ পুরুষ সদস্যের উপস্থিতিতে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।
চালা গ্রামে সাংবাদিক প্রবেশ রুদ্ধ
মানিকগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক এবং অনলাইনের কোন সাংবাদিকদের মীর কাসেম আলীকে যেখানে দাফন করা হবে সেই চালা গ্রামে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
চালা গ্রাম থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে ঘিওর উপজেলার কলতা বাজার এলাকায় সাংবাদিক বহনকারী মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল আটকে দেয়া হয়।
আটকে থাকা সাংবাদিকদের মধ্যে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠ ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধি গোলাম ছারোয়ার ছানু জানান, পুলিশ সুপার তাদের জানিয়েছেন হাইকমান্ড থেকে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়া হয়নি।
মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বিপিএম বলেন, হাই কমান্ড থেকে সাংবাদিকদের ঘটনাস্থলে প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকায় তাদের পক্ষে করার কিছু নেই।