নিউজ ডেস্ক::
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক চাপের কথা ঘুরেফিরে বললেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তারা মামলা, হামলা ও হয়রানি থেকে নিজেসহ মাঠ প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং এসিল্যান্ডদের বাঁচাতে সুরক্ষা চেয়েছেন। পাশাপাশি বলেছেন, কোনো কোনো জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীর চাপে অনেক সময় সরকারি বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার করা যায় না। এ কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নও ব্যাহত হয়। এসডিজি
বাস্তবায়নে সরকারের টার্গেট পূরণও দুরূহ হয়ে পড়ে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের সেশনে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনগুলোতে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সামপ্রতিক সময়ে একজন ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিন দিনের ডিসি সম্মেলনে ৩২১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একাধিক ডিসি’র সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেশনে ঘুরেফিরে রাজনৈতিক চাপের কথা আলোচিত হয়। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সেশনে ডিসিরা জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কাজের গুণগত মান আরো বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিডিএলজিকে এসব প্রকল্প পরিদর্শনের ক্ষমতা দেয়ার কথা বলেন। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, গ্রামের মুরব্বি, নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, নারী সংগঠক, আনসার-ভিডিপি, গ্রামপুলিশ, এনজিও কর্মীসহ সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি দলের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ চান ডিসিরা। এসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ থাকেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সেশনে ডিসিরা ম্যানেজিং কমিটি আধুনিকায়ন করার সুপারিশ করেন। ডিসিরা বলেন, মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্য ও শিক্ষিত লোক থাকা প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া জরুরি। এমনটা হলে শিক্ষার মানেরও উন্নতি হবে। শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য ডিসিদের আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি নোট বইসহ সহায়ক বই জব্দ করার জন্য ডিসিদের সহযোগিতা চান। এদিকে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নিজেদের নানা সমস্যার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে জানান ডিসিরা। তারা বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গেলে সময় মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাওয়া যায় না। এজন্য তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সেশন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ডিসিরা যখনই চাইবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা পাবেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এ মুহূর্তে ভালো আছে। নিজ নিজ এলাকায় এ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ডিসিরা আমাকে জানিয়েছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ পাওয়া যায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। আমি তাদের আশ্বাস দিয়েছি, এখন থেকে ডিসিদের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ এবং আনসার সদস্য দেয়া হবে। ডিসিদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করা মাদক ব্যবহারকারী ও পাচারকারীদের পুনর্বাসন করারও নির্দেশনা দিয়েছি। ডিসিরা জানান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কোনো কোনো সেশনে মাঠ প্রশাসনের ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়টিও শুনতে হয়েছে। শেষ দিনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সকালের সেশনে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ সরকারি অফিসের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে ডিসিদের কঠোর নির্দেশ দেন। বাইরে বেরিয়ে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, ভূমি অফিসগুলো ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। এমনটা হলে ঘুষ-দুর্নীতি কমে যাবে। এদিকে তিন দিনের ডিসি সম্মেলনে ৩২১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। গতকাল সচিবালয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই আয়োজন শেষ হয়। তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। মোট ২২টি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অংশগ্রহণকারী ৫২টি মন্ত্রণালয়ের ১৮টি কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা অংশ নেন। নিয়মানুযায়ী কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শেষ দিন বিকাল চারটায় সমাপনী অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, তিন দিনে ৩২১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, সমন্বয়হীনতাও থাকবে না। মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ডিসিরা চাওয়ামাত্র পুলিশ প্রদান, সাধারণের আইনি সহায়তা বৃদ্ধি করতে স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠনের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিরোধ, সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সরকারের নীতি, দর্শন, প্রাধিকার নিয়ে বৈঠক হয়। এবার পাওয়া প্রস্তাবের সংখ্যা ছিল ৩৪৯টি। এগুলো ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত। ২৬শে জুলাই সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করেন ডিসিরা। প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে এক অধিবেশনে মুক্ত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মাঠ প্রশাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়গুলো শুনে নির্দেশনা দেন।
দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তান থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম রুটের কনটেইনারবাহী জাহাজ ‘এমভি ...
পাঠকের মতামত