নিউজ ডেস্ক::
জীবন বাঁচাতে সবকিছু ফেলে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা সাগরপথে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। আর সেখানে ফাঁয়দা লুটের রমরমা ফাঁদ বসিয়েছেন স্থানীয় কিছু বোট মালিক ও পুলিশের অসাধু সদস্যরা। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত টেকনাফের বাহাড়ছড়া, শাপলাপুর, জাহাপুরা পয়েন্ট দিয়ে ৫ শতাধিক মাছধরার ট্রলারে চড়ে ২০ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন ট্রলার মালিক ও স্থানীয় পুলিশ।
টেকনাফের বাহাড়ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ মঙ্গলবার পরিবর্তন ডটকমকে জানান, কুতুপালং ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কিছু রোহিঙ্গা গতকাল সোমবার রাত থেকে বাহারছড়া, শামলাপুর ও জাহাজপুরা উপকূলে এসে মাছধরার ট্রলার ভাড়া করে মিয়ানমারে গিয়ে তাদের স্বজনদের নিয়ে আসছে। সোমবার রাতে ১২-১৫ টি বোট আসলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে শত শত বোটে করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এই উপকূল দিয়ে পালিয়ে এসেছে।
মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে প্রশাসনের কড়াকড়ি বেড়ে গেলে রোহিঙ্গা আসা কিছুটা কমেছে।
ফয়েজ উল্লাহ নামের জাহাজপুরার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, প্রতি বোটে ২০ হাজার টাকা করে ভাড়া নেয়া হয়। তার মধ্য থেকে বাহাড়ছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কানছন কান্তি দাশকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। টাকা না পেলে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে আটকে রাখছে। পরে টাকা দিলে পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে। এ ছাড়াও প্রতি বোটে ২ হাজার টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হচ্ছে। ইজারাদারকে টাকা না দিলে বোট ভিড়তে দিচ্ছে না।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা গুলিবিদ্ধ লিয়াকত আলী অভিযোগ করেছেন, ৫ দিন অনাহারে নাফ নদীর পাড়ে লুকিয়ে ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে একটি ট্রলারে করে টেকনাফের বাহারছড়া ঘাটে আসেন। ঘাটে আসার পর পুলিশ ২ হাজার টাকা দাবি করে। পুলিশকে টাকা দিতে না পারায় তাদেরকে বোট থেকে নামতে দেয়া হচ্ছিল না। পরে মালয়েশিয়া থেকে তার ছেলে টাকা পাঠালে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
রোহিঙাদের কাছে বাহারছড়া পুলিশের টাকা আদায়ের বিষয়টি অন্তর্জাতিক একটি গনমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়লে পুলিশের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। বিকেলের পর থেকে বাহারছড়া ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান শুরু করে নিরীহ মানুষকে আটক করা শুরু করে।
রোহিঙাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে হলেও তা অস্বীকার করেছেন বাহাড়ছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কানছন কান্তি দাশ।
তিনি দাবি করেন, স্থানীয় কিছু ট্রলার মালিক মাছধরা বন্ধ করে রোহিঙ্গা আনা শুরু করেছে। তারা টাকার বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে।
এদিকে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে আটকের পর ৩ হাজার ২১৫ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এ সময় রোহিঙ্গাদের বহনকরা ২৫টি নৌকা জব্দ করা হয়। সুত্র: পরিবর্তন ডটকম