টেকনাফে ক্যাম্পে অবস্থারত রোহিঙ্গারা টাকার বিনিময়ে কৌশলে জাতীয়তা সনদ ও জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করছেন। সংগ্রহ করা এসব সনদ ব্যবহার করে অহরহ রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়ে স্কুল-মাদরাসা, কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে অবাধে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানাগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, স্কুল-মাদরাসা এবং কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয়তা সনদ প্রয়োজন। প্রতিবছর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শত শত রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হচ্ছেন বলে স্থানীয় অভিভাকরা জানিয়েছেন। জন্মনিবন্ধন এবং জাতীয়তা সনদ ছাড়া ভর্তির বিধান না থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয় সমূহে রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েরা কি করে ভর্তি হচ্ছেন? তারা কিভাবে সনদ এবং জন্মনিবন্ধন পেলেন? না থাকলে কিসের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। আর ভর্তি হওয়া এসব রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েরা কি করেই জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয়তা সনদ সংগ্রহ করেছেন তা নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রীদের ক্যাম্পের বাইরে অধ্যায়ন করার কোন বিধান না থাকলেও তারা কিন্তু প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে শত শত রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী বিভিন্ন কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছেন। অনেকে আবার লেখাপড়া শেষ করে বিভিন্ন সংস্থায় চাকুরীও করছেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে অন্যকিছু মনে হলেও অবৈধভাবে অধ্যায়নরত এসব রোহিঙ্গারা কিন্তু দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিষয়টি খুবই আশংকার কারণ জানিয়ে সচেতন অভিভাবক এবং শিক্ষিত মহল দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, টেকনাফের মুচনী নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের ৬৬৬নং শেডের ৩নং রোমের (৩৪৩১৩ এমআরসি) আব্দুল কাদের এবং আলমাছ বেগমের ছেলে মো: জহির মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাতীয়তা সনদ সংগ্রহ করেছেন। সে হ্নীলা ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ লেদা গ্রামের ঠিকানা দিয়ে চলতি সনের ২২জানুয়ারী সনদটি সংগ্রহ করেছেন। যার সনদ নং-১৬৭০৩। উক্ত জহির বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এসিএফ সংস্থায় চাকুরী করছেন। অনুসন্ধানে জানাগেছে, লেদা জুনিয়র হাইস্কুল, হ্নীলা প্রি-ক্যাডেট স্কুল, হ্নীলা আল ফালাহ একাডেমী, হ্নীলা হাইস্কুল, হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হ্নীলা শাহ মজিদিয়া মাদরাসা, মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ, উপজেলার প্রায় সব কওমী মাদরাসাসহ বিভিন্ন সরকারী/বেসরকারী স্কুল মাদরাসা এবং কলেজে রোহিঙ্গা ছেলে/মেয়েরা লেখাপাড়া করছেন। অনুসন্ধানে জানাগেছে, মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজে ১ম বর্ষে মানবিক শাখায় অধ্যায়নরত ফাতেমা আক্তার, একই বিভাগের আখতার হোছাইন, রশিদ উল্লাহ, দিল মোহাম্মদ, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আব্দুল হামিদ উখিয়া ডিগ্রী কলেজের মানবিক শাখা অধ্যায়ন করছেন। কক্সবাজার হার্ভাড কলেজে মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো: করিম, মো: ইসমাঈলসহ অনেকে পড়ছেন। একই ক্যাম্পের মো: আনিছ কক্সবাজার সিটি কলেজে অধ্যায়ন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়ে রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রীরা কৌশলে জাতীয়তা সনদ নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার আব্দুস সালাম তাঁর স্কুলে রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী অধ্যায়ন করছেন বিষয়টি সত্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমার স্কুলে ১% মত রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী থাকতে পারে। রোহিঙ্গা ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে হ্নীলা বালিকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমার জানামতে বালিকা স্কুলে ১%ও নাই। তবে তিনি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান। লেদা জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামাল হোছাইন বলেন, আগের বছরে রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি করা হলেও এবছরে তার সংখ্যা খুবই কম। তবে তিনি হ্নীলার বিভিন্ন স্কুলে রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী অধ্যায়নের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশিষ বোষ বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে লেখা-পড়া করার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কোন স্কুল বা মাদরাসা রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রীদের ভর্তি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী মো: শফিউল আলম রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের সাথে কথা বলার পরমার্শ দিয়ে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রোহিঙ্গদের ক্যাম্পের বাইরে পড়ার কোন সুযোগই নেই। তবে রোহিঙ্গা ছাত্র/ছাত্রী কিভাবে ভর্তি হচ্ছে বা কর্তৃপক্ষ কিসের অনুবলে ভর্তি করাচ্ছেন তাতো আমার বুঝাই আসে না। %a4-2/#sthash.YLTraYVr.dpuf
পাঠকের মতামত