প্রকাশিত: ২৫/০৭/২০১৬ ১০:০৫ পিএম

20160722_175043-640x335জসিম মাহমুদ, টেকনাফ :
টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ আজকের এই দিনে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই বঙ্গোপসাগরের প্রবল জোয়ারের তোড়ে শাহপরীরদ্বীপ দক্ষিণ ও পশ্চিমপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে সাগরের পানির তীব্র স্রোতে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের একটি অংশ ভেঙ্গে নিয়ে যায়। সেই থেকে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে টেকনাফের সাথে শাহপরীরদ্বীপের। জোয়ার-ভাটায় সেই ভাঙ্গা অংশ বাড়তে বাড়তে এখন ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্থ হয়েছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে সড়কের আরো নতুন নতুন অংশ। অথচ তার আগে টেকনাফ-কক্সবাজারের সাথে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু ছিল শাহপরীরদ্বীপের। টেকনাফ থেকে শাপপরীরদ্বীপের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার হলেও বিধ্বস্থ ৪ কিলোমিটার ভাঙ্গা অংশের কারনে বর্তমানে এই ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি কয়েক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। তার উপর নৌকা, সিএনজি, জীপ নিয়ে কয়েকদফা গাড়ী বদলিয়ে আসা যাওয়া যেন সেই প্রাচীন যুগের কথা মনে করিয়ে দেয় এলাকাবাসীকে। বর্ষা মৌসুম এলে যাতায়াতের এই দূর্ভোগ বেড়ে যায় বহুগুন। সবচেয়ে বেশী দূর্ভোগ পোহাতে হয় বিধ্বস্থ সড়ক দিয়ে নৌকা পার হয়ে অসুস্থ, নারী ও বৃদ্ধদের টেকনাফ যাতায়াত করা।ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে শাহপরীরদ্বীপবাসী জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানিয়ে আসলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি গত চার বছরে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ না করলে বিচ্ছিন্ন সড়কটি সংস্কার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তারা বলছেসড়কটি মেরামতের জন্য টেন্ডার হওয়ার পরও কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকার কারনে।সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোছেন জানান, সড়ক বিভাগ চাইলে কয়েক ফুট উচু করে সড়কটি মেরামত করতে পারতো। সে ক্ষেত্রে জোয়ারের পানি ঢুকলেও সড়ক যোগাযোগে কোন সমস্যা হতো না, এলাকার মানুষের যাতায়াত সমস্যা লাঘব হতো। অথচ গত চার বছর ধরে বাঁধ মেরামতের দোহাই দিয়ে সড়ক বিভাগ কাজে হাত দিচ্ছেনা।তিনি মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি ক্ষতির প্রভাবটা পড়েছে শাহপরীরদ্বীপের উপর। সাগরের পানির উচ্চতা দিন দিন বেড়েই চলছে।এই নাজুব অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে টেকসই উচু বেড়ী বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ করতে হবে। না হলে শাহপরীরদ্বীপ একদিন সাগর গর্ভে তলিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের স্থল ভাগের শেষ সীমানা টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ৪০ হাজার উর্ধ্ব জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে নাফ নদী, দক্ষিণে সাগর আর নাফনদীর মিলন মোহনা বদর মোকাম এলাকা বেড়িবাধ দিয়ে রক্ষা হয়ে আসছিল।

কিন্তু ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা বাঁধের ৭ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে নির্মিত বেড়ী বাঁধ ২০০৫ সালের প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের তোড়ে বড় ধরণের ভাঙ্গনের ফলে শত শত পরিবার গৃহহারা, ফসল ও চাষাবাদের জমিতে লবন পানি প্রবেশ করতে থাকে।তাছাড়া সাগরের জোয়ারের পানির কারনে লবণ মাঠ, ঘের, ফসলী জমি ও বসত-ভিটায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেই ভাঙ্গন দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া মাঝের পাড়া,উত্তরপাড়ার কিছু মসজিদসহ কয়েকশ’ বসত-ভিটা, বাড়ি ঘর সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ভাঙ্গন দিয়ে সাগরের লোনা পানি প্রবেশ করে লোকালয় গ্রাস করছে।

ফলে সাগর উপকূলীয় শাহপরীরদ্বীপ এলাকার লোকজনের চোখের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় জোয়ারের লবন পানি ডুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফলে চিংড়ী ঘের, ফসলী জমি, বসত বাড়ী ও বিভিন্ন গাছপালা ধ্বংস হয়ে পড়ছে। এমনকি রাতে জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করায় লোকজনকে ঘর-বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ফলে গত ৪ বছর ধরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ৪০ হাজার জনগন চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী টেকনাফের দায়িত্বে থাকা গিয়াস উদ্দিন জানান,রিং বাঁধটি  প্রায় ১১ চেইন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বর্ষার কারনে কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হলেও অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে পুনরায় কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। এই রিং বাঁধটি নির্মিত হলেও দূর্ভোগের অবসান হবে বলে মনে করেন তিনি।

তাছাড়া কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান জানান, শাহপরীরদ্বীপ রক্ষায় টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মানে ১০৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে শাহপরীরদ্বীপ রক্ষায় স্থায়ী সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।

শাহপরীর দ্বীপ ইউপি মেম্বার রেজাউল করিম রেজু জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ শুস্ক মৌসুমে কোন কাজ না করে বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ কাজে হাত দেয় ফলে বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেনা। ফলে বছর বছর শাহপরীরদ্বীপের দূর্ভোগ আর শেষ হচ্ছেনা।

পাঠকের মতামত

পদ্মা উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন বেস্ট এন্টারপ্রেনার অ্যাওয়ার্ড পেলেন পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক

দেশের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও উদ্যোক্তাদের পদ্মা উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন বেস্ট এন্টারপ্রেনার অ্যাওয়ার্ড ও সনদ প্রদান ...