উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩/১১/২০২৪ ৭:২২ এএম
সেন্টামার্টিন জেটি

প্রতিবছর নভেম্বর প্রথম থেকে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল পুরোদমে শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের গৃহিত উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধের জটিলতার কবলে তা শুরু করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ জাহাজ চলাচল শুরু হতে তাও এ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীন স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করে। যে পরিপত্রে ৫ টি বিষয় উল্লেখ রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে সেন্টমার্টিনে নৌ যান চলাচলের বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে। রত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবেনা, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। বার বি কিউ পার্টি করা যাবে না।
সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহি জাহাজ মালিকেদের সংগঠন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে সেনটমার্টিন দ্বীপে পর্যটনবাহি জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে আসছে। এবারও ৩ টি জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ শত যাত্রী ধারণ ক্ষমতার কেয়ারী সিনবাদ, সাড়ে ৭ শত যাত্রী ধারণ ক্ষমতার কর্ণফুলী, সাড়ে ৮ শত যাত্রী ধারণ ক্ষমতার বার আউলিয়া জাহাজ প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি এখনও পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতির ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। ফলে সম্মতি না পেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের অনুমতি প্রদান করছেন না। কবে থেকে এই অনুমতি পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কারও সাথে আলাপ করা সম্ভব হয়নি।
তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ইতিমধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় দিয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে জাহাজ চলাচলের কথা রয়েছে। কিন্তু সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত বিষয়টি সম্পাদনে কাজ চলছে।
এটি চুড়ান্ত হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে দ্রুততর সময়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
এদিকে প্রশাসনিক বিধিনিষেধি বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জাহাজ চলাচলের অনুমতির বিষয়টি আটকে গেছে বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি জাহাজের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুলত সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়া এবং নভেম্বরে যাওয়া পর্যটকরা রাত্রি যাপন করতে না পারার বিষয়টিকে বাস্তবায়ন করতে তা নিয়ে জটিলতাটি তৈরি হয়েছে। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ বিষয়ে একটি অ্যাপ আদলে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে বিষয়টি জাহাজ মালিকদের পক্ষে বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জাহাজ মালিকরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজী নন।
সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, এটি জাহাজ মালিকরা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। ২ হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এখনও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কেউ গ্রহণ করেনি। এরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের মানুষ গণহারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা জাহাজ কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিলে উল্টো দ্বীপবাসি সহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ হবেন।
২ হাজারের বেশি পর্যটন না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য ক্ষতিকর দাবি করে এটি বাতিলের দাবি জানান তিনি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিতকরণ ও পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সেন্টমার্টিন’স দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট নামের এক সংগঠণ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট ১৩ সংগঠনের জোট এটি। যেখানে রয়েছে ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার, হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, ‍সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতি, সেন্টমার্টিন বাজার দোকান ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, বোট মালিক সমিতি, স্পিড বোট মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, সেন্টমার্টিন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি, সেন্টমার্টিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ঢাকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সেন্টমার্টিনের শিক্ষার্থী, সেন্টমার্টিন অটো রিক্সা মিনি টমটম ভ্যান মালিক সমবায় সমিতি।
এই জোটের চেয়ারম্যান শিবলুল আজম কোরেশী, সভাপতি এম এম সাদেক লাবু ।
তারা বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ এবং ভ্রমণ সীমিতকরণের কারণে পর্যটন শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত তিন লাখের বেশী মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে পর্যটক যাতায়ত অব্যাহত রাখতে সুপরিকল্পিত সংস্কার করতে হবে।
এদিকে কক্সবাজারের ইনানীর সমুদ্র সৈকতের নৌ বাহিনীর জেটিটি ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাতে দুই খণ্ডিত হওয়ার পর এটি সংস্কার এবং উচ্ছেদের দাবিতে দুইটি পক্ষ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এই নিয়েও জাহাজ চলাচলে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, গত ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নৌমহড়া উপলক্ষে উখিয়ার ইনানী এলাকায় নৌবাহিনী একটি জেটি নির্মাণ করে। নৌমহড়া শেষে নির্মিত এই জেটি দিয়ে পর্যটন মৌসুম নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়। গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সাগরের ঢেউয়ের প্রচন্ডতায় সংস্কারকাজে নিয়োজিত একটি বার্জের ধাক্কায় জেটিটির একটি অংশ ভেঙ্গে দুই খণ্ডিত হয়ে গেছে। ঘটনার পর জেটিটির সংস্কারকাজ শুরু না করায় সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলে বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
এ পরিস্থিতির মধ্যে জেটিটি সৈকতকে দুই খণ্ডিত করেছে এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতি দাবি করে উচ্ছেদের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নোটিশ প্রেরণ করে এটি উচ্ছেদের জন্য বলেছে।
এতে জেটিটি উচ্ছেদের পাঁয়তারা বন্ধ এবং সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা।

পাঠকের মতামত