ফরিদুল মোস্তফা খান, কক্সবাজার :
কয়েক বছর আগেও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের প্রাণকেন্দ্র সোনাদিয়া দ্বীপে এখন যাচ্ছেন না কোনো পর্যটক। সেখানকার জীব বৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে। অথচ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর চরাঞ্চল ও দৃষ্টিনন্দন সৈকত সোনাদিয়া দ্বীপ। ৪ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমির ওপর পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে এর অবস্থান। এ দ্বীপের ১ হাজার ৪৭ দশমিক ৮৪ একর জমির ওপর সংরক্ষিত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। এ নিয়ে ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। কিন্তু প্রায় ৪ বছরেও এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা মতে, প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইকো-রিসোর্ট গড়ে তোলা হবে। তবে এমন একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে একটু সময় লাগবেই। কারণ কাজ বাস্তবায়নের আগে সরকারকে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপকে ঘিরে পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় পর্যটন মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি সোনাদিয়া দ্বীপ পরিদর্শন করেন পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী। পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠকে সোনাদিয়া দ্বীপের কোনো জমি কাউকে লিজ না দিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে নতুনভাবে বসতি করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে এবং দ্বীপে বসবাসকারীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের বিষয়েও একটি রূপরেখা তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর পর কিছুদিন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তৎপরতা দেখা গেলেও বর্তমানে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো রূপ রেখাও তৈরি হয়নি।
জানা যায়, সোনাদিয়ায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি শুঁটকি মহাল, চিংড়ি চাষ ছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক বনায়ন ও বালুময় চরাঞ্চল। এখানে রয়েছে বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্যম-িত প্যারাবন এবং দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত। লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, দ্বীপবাসীর নিজস্ব সংস্কৃতি, হযরত মারহা আউলিয়ার মাজার ও তার আদি ইতিহাস, জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, প্যারাবনবেষ্টিত আঁকাবাঁকা নদীপথে নৌকা ভ্রমণ ও স্পিডবোট দিয়ে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে সাগরের মাঝপথে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য অবলোকন পর্যটকদের জন্য অনন্য আকর্ষণ। কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সরকারি বা বেসরকারি যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় এখনো গড়ে ওঠেনি দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন করা গেলে এ দ্বীপ পর্যটন বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি দ্বীপবাসীর বিকল্প আয়ের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এ দ্বীপের জনসংখ্যা ৮১০ জন। সূত্র জানায়, কক্সবাজার উপকূলের এ দ্বীপে ১ হাজার ২১৫ প্রজাতির বৈচিত্র্যময় জীব রয়েছে।