অক্টোবরেই পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাবে ট্রেন। এ লক্ষ্যে চলছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের শেষ পর্যায়ের কাজ। ইতোমধ্যে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ট্রেনের ছয়টি বগি এবং একটি ইঞ্জিন। যেগুলো গত এক মাস ধরে অবস্থান করছে পটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের সামনে।
এ প্রসঙ্গে পটিয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট ব্রিজের সংস্কার কাজ শুরু হয়। ৭ আগস্ট থেকে ব্রিজ দিয়ে ট্রেন এবং যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগেই ৬ আগস্ট ছয়টি নতুন বগি এবং একটি ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন আনা হয়। যেগুলো রাখা আছে পটিয়া রেলস্টেশনের সামনে। এসব বগি ও ইঞ্জিনের মাধ্যমে কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথে ট্রায়াল রান এবং উদ্বোধন করা হবে। এজন্য বগি ও ইঞ্জিন আগেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট ব্রিজ দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানালেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা। তিনি বলেন, ‘ব্রিজটি মজবুত করা হচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কার শুরু হয়। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সংস্কারকাজের জন্য সব ধরনের যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। সংস্কার শেষ হলে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হবে।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। সেতু পার হওয়ার সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। তবে কক্সবাজারগামী ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২-১৫ টন। ট্রেনের গতি হবে সর্বোচ্চ ৮০-১০০ কিলোমিটার।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজারে ৯২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে ছোট-বড় প্রায় সবকটি ব্রিজ-কালভার্ট। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৮ শতাংশ। চলতি মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার টার্গেট আছে। আগামী অক্টোবরেই প্রকল্পের উদ্বোধনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
এদিকে, গত ৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনের টানা বৃষ্টিতে ডুবে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা। বন্যায় সাতকানিয়া উপজেলার তেমুহনি এলাকায় ২৫০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওসব এলাকায় রেললাইন থেকে পাথর-মাটি সরে যায়। এ কারণে দেবে যায় রেললাইনের বেশ কিছু অংশ। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন সংস্কার করা হয়েছে।
সম্প্রতি বন্যায় সাতকানিয়া উপজেলার তেমুহনি এলাকায় ২৫০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, পরে তা সংস্কার করা হয়েছে
সম্প্রতি বন্যায় সাতকানিয়া উপজেলার তেমুহনি এলাকায় ২৫০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, পরে তা সংস্কার করা হয়েছে
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯২ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন