উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে একটি দূরবর্তী দ্বীপে স্থানান্তরিত করতে চলেছে বাংলাদেশ। ওই এলাকাটি খারাপ আবহাওয়া ও দুর্যোগপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ওখানেই আগামী মাস থেকে স্থানান্তরিত করা হবে শরণার্থীদের, মঙ্গলবার জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ভাসাণ চরে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য নবনির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলির উদ্বোধন করবেন 3 অক্টোবর। ভাসান চর একটি কর্দমাক্ত ক্ষুদ্র দ্বীপ। 2006 সালে বঙ্গোপসাগর থেকে জেগে উঠেছে এই দ্বীপটি। বিতর্কিত এই পরিকল্পনাটি ইতিমধ্যেই সময়সূচী থেকে পিছিয়ে পড়েছে।
কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন যে, মায়ানমারের সীমান্তের কাছে ভিড়ে ঠাসা উদ্বাস্তু শিবির থেকে শরণার্থীদের ওই দ্বীপে পাঠানো হবে জুন মাসেই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা জানিয়েছেন, নৌবাহিনী ওই 100,000 উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টির দায়িত্ব নেয়। ইতিমধ্যেই অরায় অনেকটাই কাজ শেষের পথে।
“প্রাথমিকভাবে, প্রথম পর্যায়ে 50 থেকে 60 রোহিঙ্গা পরিবারকে স্থানান্তরিত করা হবে আগামী মাসে।” বলেন হাবিবুল কবির চৌধুরী।
বাংলাদেশ, একটি নিম্নভূমির দেশ। ক্রমবর্ধমান সমুদ্রতলের উচ্চতা থেকে বেশি নিরাপদ উচ্চতায় নেই এই দেশ। বিশেষ করে এপ্রিল ও নভেম্বরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা দেখা দেয়।
গত 50 বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন যার, বেশিরভাগ ভাসান চরের কাছে উপকূলীয় অঞ্চলে।
দ্বীপটি নিকটতম মূল ভূখণ্ড থেকে নৌকায় যেতে এক ঘন্টা লাগে কিন্তু ভয়ানক ঝড় বা সমুদ্রের বিপদজনক তুফানে মাঝে মাঝে ওই দ্বীপে যাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে।
সেখানে শরণার্থীদের নূতন স্থান নির্দেশ করা পরিকল্পনা গত বছর আগস্ট মাসে মায়ানমার থেকে 700,000 রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে আসেন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে। শরণার্থী শিবির উপচে পড়ে, তার পরেই তাঁদের পুনর্বাসনের প্রকল্প নেওয়া হয়।
মানবাধিকার দলগুলি বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বেশি থাকার কারণে ইতিমধ্যেই বসবাসের অযোগ্য ওই দ্বীপে শরণার্থীদের স্থানান্তরের প্রকল্প বাতিলের আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসনকে। যদিও সরকার ইতিমধ্যেই ওই দ্বীপকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য 280 মিলিয়ন ডলার খরচা করে ফেলেছেন।
নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, “বন্যা প্রতিরোধক তৈরির জন্য পুরো দ্বীপ জুড়ে তিন মিটার উচ্চ (9 ফুট) বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা উদ্বাস্তুদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত।”
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, “শরণার্থীরা দ্বীপটিতে মানবিক স্বার্থে প্রবেশ করতে পারবে এবং মাছ ধরার প্রশিক্ষণও পাবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলি ছাড়তে বাধ্য করা হবে না উদ্বাস্তুদের। কক্সবাজার পৃথিবীর সবচেয়ে জনাকীর্ণ স্থানের মধ্যে অন্যতম। ধ্বস, রোগ এবং অন্যান্য বিপদ প্রবণ এই এলাকাটি।
“আমরা যদি তাঁদের পূর্ণ মানবিক সহায়তা দিতে নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমার তো মনে হয় না ওই দ্বীপে না যাওয়ার কোনও কারণ রয়েছে। ওদের বোঝাতে হবে” বলেন এক কর্মকর্তা।