ইফতিয়াজ নুর নিশান::
বাংলাদেশ,প্রায় দুইশত চব্বিশ বছরের পরাধীনতাকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরাজিত করে জন্ম নেওয়া বিশ্বময় একটি বিস্ময়ের নাম। আমরা স্বাধীন জাতি, ৭১ এ স্বাধীনতা অর্জনের পর গত ৪৬ বছর ধরে একটু একটু করে পরিণত হয়ে জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রযাত্রা আজ ভবিতব্যে বিশ্বজয়ের। ছোট ভুখন্ডে বিশাল জনসংখ্যার ভার যেখানে আমাদের জাতীয় সমস্যা,সেখানে সম্প্রতি ৪ লাখের ও বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আমাদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি হিসাবানুযায়ী, বর্তমানে এদেশে প্রায় ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে যারা ১৯৭৮,১৯৯১,২০১২,২০১৬-১৭ এ বড় পরিসরে এবং নিয়মিত পার্শ্ববতী রাষ্ট্র মায়ানমার থেকে এসেছে। আমরা মানবিক উদারতায় তাদের আশ্রয় দিয়েছি, আমাদের জন্মভুমিতে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, “১৬ কোটি মানুষের খাবার দিই৷ সেই সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষকে খাবার দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। আমরাও তো রিফিউজি ছিলাম। রিফিউজি থাকার যন্ত্রণা কী, তা আমরা বুঝি”। জ্বী, আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার অদম্য নেতৃত্বে বর্তমানে খাদ্যে স্বনির্ভর জাতি। বাঙ্গালীরা অতিথি পরায়ণ যা বিশ্ব স্বীকৃত। খাওয়ানোর সক্ষমতা আছে বলেই, আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক আতিথেয়তা দিচ্ছি কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের এই দায়িত্ব সাময়িক, আজীবন নয়। উদ্বাস্তু হওয়া রোহিঙ্গাদের মতো আমরা ও শরণার্থী হয়ে ছিলাম স্বাধীনতার জন্য, তাই তাদের দুর্দর্শা বুঝতে পেরে আমাদের আবেগ স্বজাত মনে তাদের প্রতি মানবিক বোধের জন্ম হয়েছে, এবং এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কম নয়, আমরা শরণার্থী হলেও অল্প সময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বিশ্বাস ও অনবদ্য সংগ্রামের ফলে। আর তারা যুগের পর যুগ শরণার্থী হয়ে আছে। রোহিঙ্গারা স্বশিক্ষিত হলেও বিশ্ব পরিস্থিতিতে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা তাদের নেই কারণ শাসন আর শোষণের ফলে তারা বঞ্চিত আর তাই তাদের অপরাধ প্রবণতাও বেশি। বাংলাদেশ যেমন তাদের মানবিক আশ্রয় দিয়েছে তেমনি করে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা দের পাশে দাড়িয়ে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গা দের নিপীড়িত হওয়ার গল্প টা যুগ আর যুগ পেড়িয়ে দীর্ঘতর হচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তাই আমাদের বাংলাদেশটাই তাদের নিরাপদ ভরসা। কিন্তু উন্নয়নশীল একটা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গারা হুমকি সমতুল্য। সীমান্ত জনপদ উখিয়া আর টেকনাফের মানুষ জানে রোহিঙ্গারা তাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর।এক পরিসংখ্যানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উপজেলা দুটিতে সংগঠিত হওয়া স্থানীয় অপরাধের ৭০ শতাংশই করে থাকে রোহিঙ্গারা। তারা অপরাধ না করেই করবে বা কি, অনেক বছর ধরে যে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শুধু অপরাধ নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণেও তারা আমাদের জন্য প্রতিবন্ধক। আমরা তাদের মানবিক আতিথেয়তায় সহনশীল রাখলেও বিভিন্ন কারণে, তারা সময় সুযোগ পেলে আমাদের বড় ক্ষতি করতে দ্বিধা করবে না। আর তাই তাদের আশ্রয় যখন দিয়েছি,সরকারের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে গভীর পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট বেষ্টনীর মধ্যে তাদের প্রত্যেক কে নিয়ে আসা। আমরাও চাই রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মায়ানমার এর নাগরিকত্ব পাক, সেই সাথে ফিরে পাক তাদের সব মৌলিক অধিকার। তবে, ২০২১ সালের মধ্যে সম্ভাব্য মধ্য আয়ের দেশ, বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাড়াবে এই রোহিঙ্গারাই যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হয়। আমরা যদি এখুনি তাদের ব্যাপারে সচেতন না হই, আসছে ভবিষ্যৎ দিনে, তারা আমাদের মাঝে মিশে গিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আমাদের অগ্রগতি কে যে বাধাগ্রস্থ করবে না? এবং আমাদের উন্নতির প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াঁবে না? তার কোন কি নিশ্চয়তা আছে? বরং আমাদের কাছে তারা একটা ভয়ে পরিণত হতে দেরি হবে না, তার একধরনের ইঙ্গিত আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতেই পাচ্ছি ।
লেখকঃ ইফতিয়াজ নুর নিশান
ছাত্র, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ,
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্রগ্রাম ও দপ্তর সম্পাদক উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ