সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় অপেক্ষা করেও দেখা মেলেনি সরকারি কোন ডাক্তারের। ইনডোরে ভর্তিকৃত ৪৬জন রোগীও এসময় পর্যন্ত কোন ডাক্তার দেখেনি ওয়ার্ডে। সরকারি সরবরাহের কোন ওষুধ নেই এখানে ৬ মাসাধি। আউটডোরে দূর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবার আশায় শত শত রোগী আসলেও বিনা চিকিৎসায় ফেরত যেতে দেখা গেছে অনেককে। কার্যত উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক শৃঙ্খলার ভেঙ্গে নিজেই ধুঁেক ধুঁেক চলছে। এটি গতকাল বৃহস্পতিবারের চিত্র।
উখিয়ার বিভিন্ন রোগী সাধারণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় আউটডোরের টিকেট হাতে শত শত রোগী হাসপাতাল করিডোরে অপেক্ষা করছে ডাক্তারের আশায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসময় আউটডোরে রোগী দেখার কথা সরকারি বেতন ভুক্ত ডাক্তার আরিফা মেহের রুমি, ডাক্তার মোছাম্মৎ কমলিকা ও ডাক্তার সাবরিনা নূর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বা আইওএম নিয়োজিত ডাক্তার সুমেন বিশ্বাস, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের ডাক্তার এনামুল হক ও এল এল পির ডাক্তার রাজীব বড়–য়া। বাস্তবে সরকারি কোন ডাক্তার গতকাল হাসপাতালে আসেন নি। আউটডোরের রোগী দেখছেন সরকারি প্রকল্প এল এল পির ডাক্তার রাজীব বড়–য়া। তিনি জানালেন, রাতে নাইট করেছি কিন্তু আজ সকালে আবার আউটডোরে রোগী দেখতে হচ্ছে যা খুবই অমানবিক। রেড ক্রিসেন্টের ডাক্তার এনাম জরুরী বিভাগে বসে গুরতর রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ রোগীও দেখছেন। আইওএম ডাক্তারও একই অবস্থা। চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা রোগী আলমাছ খাতুন (৫৫), বাদশা মিয়া (৪৭) সহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফি দিয়ে টিকেট নিয়েছি ডাক্তার দেখাবো আশায়। কিন্তু দেখা গেছে ডাক্তারের স্থলে চিকিৎসা দিচ্ছে ডেন্টাল টেকনেশিয়ান। সরকারি হাসপাতালে এ যদি অবস্থা হয় তাহলে আমরা গরীব লোকরা যাব কোথায়?
হাসপাতালে ইনডোরে ডায়রিয়া আক্রান্ত ভর্তিকৃত স্থানীয় সাংবাদিক রতন দে’র স্ত্রী। সাংবাদিক রতন জানালেন, ওষুধ তো নেই, সুই, গজ, ব্যান্ডেজ, ট্যাবসহ সবকিছু বাইরে থেকে কিনে এনে দিতে হচ্ছে। ঠিকাদারের মর্জি নির্ভর সরকারি সরবরাহকৃত খাবার নি¤œমানের হওয়ায় অনেক রোগী বাহির থেকে খাবার কিনে এনে খেয়ে থাকে। একই অভিযোগ ভর্তিকৃত প্রায় সব রোগীর। মহিলা ওয়ার্ডের রোগী মরিয়ম খাতুন (২৮), শিশু ওয়ার্ডের নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু ফরহাদের মা কুলসুমা জানায়, বুধবার রাতে ডাক্তার এসে খোঁজ নেওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোন রোগীকে দেখতে কোন ডাক্তার আসেনি। যদিও হাসপাতালের দেওয়ালে ভর্তিকৃত রোগীদের দৈনিক ৩ বার পালাক্রমে আবাসিক মেডিকেল অফিসার বা আরএমও নিয়মিত চেকআপ বা ফলোআপ করার কথা। ভর্তিকৃত রোগী ইমাম শরীফ জানায়, মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পরও আরএমও না থাকায় ছাড়পত্র নিতে পারছিনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর থেকে সর্বশেষ ওষুধ সামগ্রী আনা হলেও উখিয়া হাসপাতালের স্টোর কিপার ব্যয় বিল না পাওয়ায় তিনি ওষুধ সরবরাহ আনছেন না। স্টোর কিপার মোহাম্মদ আলী বলেন, কক্সবাজার থেকে ওষুধ সামগ্রীর আনার পরিবহন, শ্রমিক, ভ্যাট ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ব্যয়ের অতীত ৬ মাসের প্রায় ২৪ হাজার টাকা বিল দাখিল করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তা কেটে ৬ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়। তিনি বলেন, নিজের বেতনের টাকা খরচ করে সরকারি অফিসের জন্য ব্যয় করতে পারি না। তারপরও সিভিল সার্জনের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার ওষুধ সামগ্রী আনতে কক্সবাজার গেছেন বলে তিনি জানান।
উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক অনেক কর্মচারী জানায়, আমাদের বলার থাকলেও তা সম্ভব হয়না। এখানে ডাক্তারদের ডিউটি কার্যতালিকা থাকলেও তা কেউ মানতে চাই না। সব ডাক্তার নিজেদের সুবিধা মতে ডিউটি করতে চাওয়ায় কার্যত কার্যতালিকা অকার্যকর। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার গতকাল বৃহস্পতিবার উক্ত সময় পর্যন্ত অফিসে আসেননি। গুরুত্বপূর্ণ দুই কর্মকর্তা যেখানে নিয়মিত আসেন না সেখানে অন্যান্য মেডিকেল অফিসারও কর্মচারীরা কোন ধরনের অফিস করেন তা ভেবে দেখার দাবি সচেতন মহলের। গতকাল আরএমও ডাক্তার রবিউর রহমান রবি’র মোবাইল ফোনে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মাবুদের। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য বিষয়ে লোকজনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আমরা নিজেরা এ ব্যাপারে বিব্রত। অবশেষে সকাল ১১ টার দিকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাক্তার পু চ নু কে ফোন করলে তিনি চট্টগ্রামের মিটিংয়ে রয়েছে এবং পরে কথা বলবেন বলে জানালেও আর কথা বলেননি। ভোক্তভোগী উখিয়ার প্রায় আড়াই লাখ জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসা স্থল এ হাসপাতালের প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। এব্যাপারে তারা সরকারের নিকট জরুরী হস্তক্ষেপের দাবী জানান। তাদের মতে ভাগ্যিস রেড ক্রিসেন্ট, এলএলপি ও আইওএম এর অতিথি ডাক্তারগণ না থাকলে হয়তো এখানে কোন চিকিৎসাই পাওয়া যেত না।
গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ...
পাঠকের মতামত