এক-দিস গাই নিডস বিয়ারঃ
ইদানিংকালের নামদার আইনজীবী তিনি।বিলেত-ফেরত বারিস্টার!ফেসবুকে স্বক্রিয় টুয়েন্টি ফোর সেভেন।পোস্টের পর পোস্ট দিয়ে চলেন ক্লান্তিহীন।অধম মুগ্ধ পাঠক তাঁর।তো, একদিন হলো কী, বেশ খুশি মনে একটা পোস্ট দিয়ে বসলেন তিনি।মুখে অমলিন হাসি, গায়ে টী-শার্ট আর মাথায় টুপি।টুপিটা নাকি মালয়েশিয়া থেকে শখ করে উপহার হিসেবে এনেছেন তাঁর এক বন্ধু।এ পর্যন্ত সবই আছে ঠিক।কিন্তু, একটু খেয়াল করতেই দেখা গেলো, বারিস্টার সাহেবের পরিহিত টি-শার্টে ইংরেজিতে লেখা-‘THIS GUY NEEDS BEER.’ মানে ‘এই লোকের বিয়ার(মদ) দরকার।’
দুই-বোশেখের উৎসবঃ
বাংলা নববর্ষ সমাগত।বোশেখের লো হাওয়ায় উত্তপ্ত চরাচর।কালবোশেখির ডরে দুরুদুরু বক্ষ কৃষাণির-সোনাঝরা ধানগুলোর না জানি কী হয় তার।ওদিকে আবার এক শ্রেণির বঙ্গপান্ডবের কাচা-তুলা প্রস্তুতির রেশও লক্ষ্যণীয়-বলিখেলার আয়োজন করবেন তারা-প্রকাশ্য দিবালোকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় দেদারসে চলবে জুয়ার আসর।দিনে কুস্তি আর জুয়া, রাতে আবার পুতুল নাচের নামে বখে-যাওয়া বঙ্গ-ললনাদের খুললাম খুল্লা নর্তন-কুর্দন।তা যা-ই হোক, এতে এতোটুকু বিকার নেই অধমের, কিন্তু এই কর্মযজ্ঞের শুভ উদ্বোধনীটা পবিত্র বাণীর তেলাওয়াত দিয়ে হয় যবে, লা-জওয়াব আজনবী হয়ে উঠা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না অধমের।
তিন-মহাশয়ঃ
জেলা সদরে বসেছে মেলা।পণ্যমেলা।শহরের প্রাণকেন্দ্রে-একেবারে প্রাইম স্পটে। শৃংখলা-রক্ষা কমিটির তৎপরতা আর স্বক্রিয়তার জুড়ি মেলা ভার।আর এরই মধ্যে মেলার আলো-আঁধারী এক কোণায় দাঁড়িয়ে নব্য দেবদাস হয়ে উঠা এক তরুণের চুরুটে সুখটান।বেচারি আর যাই কোথা, হুকুমতের এক করিৎকর্মা কর্তা অকস্মাৎ নাযিল হয়ে পাকড়াও করলেন তরুণকে।ক্ষণকাল বন্দীত্বের পরে কড়কড়ে নোটের জরিমানা গুণে তবেই মুক্ত হাওয়ায় পুনরায় শ্বাস নিলেন তরুণ।এই ঘটনার ঠিক পরদিনই উপাদেয় অভিজ্ঞতা লাভের মোক্ষম মওকা পেয়ে ধন্য হলুম অধম।কোন এক কানুনি দায়িত্বের ফেরে অধমকে যেতেই হলো পূর্বোক্ত কর্মকর্তা মহাশয়ের সকাশে।মহাশয়ের মোকামে প্রবিস্ট হতেই দেখলুম, মহাশয় হুকুমতের কেদারায় হেলান দিয়ে বেশ আরামসেই ফুঁকছেন চুরুট!
চার-চুরুট বিভ্রাটঃ
সপ্তাহান্তে আন্তঃ-জেলা বাসে বসে আছি অধম।বাড়ি যাবো;বউ-বাচ্চার মুখ দেখে পরাণ জুড়াবো।সামনের সীটে লিফলেটের মতো মুদ্রিত কী যেনো আঁটা। খানিকটা সামনে ঝুঁকে ঠাহর করার প্রয়াস পেলুম-সরকারী দপ্তরের যত্নে ছাপা প্রচারপত্র বটে।যাতে স্বদেশী ও পরদেশী জবানে লেখা যথাক্রমে-‘ধূমপান দন্ডনীয় অপরাধ’ এবং ‘SMOKING IS A PUNISHABLE OFFENCE’।কানুনি কেতাবে কোথায় যেনো পড়েছিলুম, ধূমপান অপরাধ নয়, তবে জনাকীর্ণ, প্রকাশ্য স্থানে অর্থাৎ পাবলিক প্লেসে তা করা অপরাধ।অথচ এই লিফলেটে তো দেখি, ধূমপান বলতেই অপরাধ!ভালোই তো, ভালো না? কিন্তু অধমের দীলে খটকাটা লাগলো অন্য অনুষঙ্গে।ধূমপানই যদি অপরাধ হবে, তো বিড়ি-চুরুটের চাষবাস, উৎপাদন আর বিপণনই বা তেমনটি নয় কেনো? প্রায় সাথে সাথেই এর জবাবও উঁকি দিলো অধমের দীলের কোণে-আমরা হয়তো মার্কিন মুলুকের শাগরেদ হতে চাইছি প্রাণপণে।ওই মুলুকে যেমন বিশেষ কিসিমের চলচ্চিত্রে অভিনয় আর এর উৎপাদন কিংবা বিপণন অপরাধ নয়, কিন্তু এই কিসিমের চলচ্চিত্র দেখা অপরাধ, বিড়ি-চুরুটের ক্ষেত্রে আমাদের এখানেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই আর কি!
পাঁচ-বৈচিত্রে ঐক্যের সন্ধানঃ
বিচিত্র স্বদেশের কাহিনী এন্তার।বৈচিত্রে ঐক্যের সন্ধান ব্রত অধমের।রংধনুর সাত রং। আমাদের রং তারও বেশি।রঙ্গ-ভরা বঙ্গ মোদের।নানান রঙ্গের ফুলদানির গুলদানিতে ভরে উঠুক সবার জীবন।
নববর্ষের উষ্ণ শুভেচ্ছা সবাইকে।
মোহাম্মদ শাহজাহানঃ এডভোকেট,
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।