এডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান::
[মোল্লা নাসিরুদ্দিন কিংবদন্তী রম্য-পুরুষ।তাবৎ দুনিয়ার মানুষ এখনও বিভোর তাঁর কৌতুক আর রসরঙ্গে।সম্প্রতি অন্তর্জালে হাবুডুবু খেতে গিয়ে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের অমিয় বাণী আর কৌতুকের ইংরেজি জবানে এক সংকলন পেয়ে যাই অধম।এ থেকেই খানিকটা বঙ্গানুবাদ করে পাঠক-পাঠিকাদের সাথে ভাগাভাগির লোভটা কোনমতে সামলানো গেলো না।পাঠক-পাঠিকারা যদি চান, তো মাঝেমধ্যেই এই মণিমুক্তোর কিয়দংশ এই কলামে তুলে আনা যাবে।]
এক-পুরনো কবরঃ
-মৃত্যুর পরে আমাকে একটা পুরনো কবরে দাফন করবে।মোল্লা নাসিরুদ্দিনের নসিহত।
-কেনো?এক আত্মীয়ের জিজ্ঞাসা।
-যেনো ফেরেস্তা মুনকার-নাকির এলে এ কথা বলতে পারি যে,এই কবরে আগেই তারা এসে কাজ সেরে গেছেন;অতএব তারা এখন বরং অন্যত্র গমন করতে পারেন।
দুই-মুনাফাখোরঃ
মোল্লা নাসিরুদ্দিন বেশ কিছু ডিম কিনলেন।কেনার সাথে সাথে ক্রয়মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ডিমগুলো আবার বিক্রি করে দিলেন।কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন-লোকে আমায় মুনাফাখোর বলুক, তা-ই কি চাও?
তিন-সত্যের সংজ্ঞাঃ
-সত্য কাকে বলে?এক শিষ্য জিজ্ঞেস করলেন মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে।
-এটা এমন এক ধরণের কথা যা আমি জীবনে কখনও বলিনি, আর বলবোও না।মোল্লা নাসিরুদ্দিনের উত্তর।
চার-যৌবন আর বার্ধক্যঃ
এক মজলিসে বসে আছেন মোল্লা নাসিরুদ্দিন।মজলিসে উপস্থিৎ লোকজন যৌবন আর বার্ধক্যের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনায় মগ্ন হলেন।।পরে মোল্লা নাসিরুদ্দিন ছাড়া অন্যরা সবাই এ বিষয়ে একমত পোষণ করলেন যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শক্তি-সামর্থ্য কমে।তিনি দ্বিমত পোষণ করলেন অন্যদের সাথে।
-আমি আপনাদের সাথে একমত হতে পারছি না, ভদ্রমহোদয়গণ।কারণ, আমার ভরা যৌবনে যতোটা শক্তি-সামর্থ্য ছিলো, এখন বার্ধক্যেও তা-ই আছে।তিনি বললেন।
-এটা কীভাবে সম্ভব?একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন কি?কেউ একজন বলে উঠলেন।
-আমার বাড়ির উঠোনে বড় একটা পাথর পড়ে আছে।ভারী পাথরটা আমি যুবক বয়সে উঠোন থেকে তুলে নিয়ে ফেলে দিতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি।এখন বৃদ্ধ বয়সেও একইভাবে ব্যর্থ হয়েছি।
পাঁচ- পাগড়িঃ
একদিন নিরক্ষর এক লোক হাতে একটি চিঠি নিয়ে হাজির মোল্লা নাসিরুদ্দিনের কাছে।
-জনাব,দয়া করে এই চিঠিটা পড়ে শোনান আমাকে।লোকটা অনুরোধ করলেন।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন চিঠিটার উপর একবার নজর বুলালেন বটে, কিন্তু চিঠির একটা শব্দও বুঝতে পারলেন না।
-আমি দুঃখিত-আমি চিঠিটা পড়তে পারছি না।মোল্লা নাসিরুদ্দিন বললেন লোকটাকে।
-ছি, ছি।আপনার তো পাগড়িটার জন্যে লজ্জিত হওয়া উচিত।(পাগড়ি শিক্ষা ও জ্ঞান-গরিমার প্রতীক)।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন নিজের মাথা থেকে খুলে নিয়ে পাগড়িটা লোকটার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বললেনঃ
-এখন পাগড়িটা তো তোমার মাথায়।পাগড়িই যদি জ্ঞাণের বাহন হয়, তো তুমি নিজেই চিঠিটা পড়ে নাও।
মোহাম্মদ শাহজাহানঃ এডভোকেট,
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
পাঠকের মতামত