
উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমারে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গারা ফের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। গত দু’দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিল ৮৬ জন। যদিও এদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না দিয়ে মিয়ানমারের ফেরত পাঠিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
এদিকে মিয়ানমারের যে সংঘাত চলছে এর প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা রয়েছে। তাই এজন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। আনা হচ্ছে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ও টহলে করা হয়েছে কঠোরতা। ফলে সীমান্ত অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হবে বলে জানায় বিজিবির কর্মকর্তারা।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি জানায়, গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারের আব্রাং সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফের হ্নীলায় নৌকা যোগে নাফ নদী পার হয়ে ৮৬ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এসময় বিজিবির টহলদলের সদস্যরা দেখতে পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অন্তত ৮ টি নৌকা যোগে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। পরে তাদের আটকের পরপরই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বিজিবির দেয়া তথ্য মতে, গত দু’দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে ৮৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে টেকনাফ বিজিবি। আর গত ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৩১ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে ৩৪ বিজিবি। যার মধ্যে পুরুষ ১৬, নারী ১৪ জন ও একজন শিশু রয়েছে। ফলে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২৪ ঘন্টা টহলের ব্যবস্থা করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।
টেকনাফস্থ বিজিবির ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবু জার আল জাহিদ জানান, বর্তমানে মিয়ানমারের সহিংসতা চলছে। যার কারণে গত ২০ দিন ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সকল ধরণের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মিয়ানমারের লোকজন পিয়াজ, রসুন কিংবা ওষুধ জন্য হলেও এক দিন অথবা তিন দিনের পাস নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসত। কিন্তু এ পাসও বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গারা নাফ নদী পার হয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এছাড়াও ধানের কাটার কাজ ও চিকিৎসার কারণ তো রয়েছেই।
মিয়ানমারের সহিংসতার প্রেক্ষিতে সীমান্তে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি অধিনায়ক জানান, মিয়ানমারের মংডু থেকে উত্তর দিকে রোহিঙ্গা এলাকাতে মারামারি ও ঝামেলাটা হচ্ছে বেশি। যা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা দমদমিয়া থেকে হোয়াইক্যং পর্যন্ত পড়ে। ফলে ওইদিক থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকাটা বেশি। তাই ওই হিসেবে এসব সীমান্ত এলাকায় অন্য বিওপি থেকে বিজিবি সদস্য এনে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্তে টহল জোরদার করার জন্য আগামীকাল (বুধবার) চট্টগ্রাম থেকে আরো ৩ প্লাটুন বিজিবি টেকনাফ দায়িত্বপালন করবে। একথায় বলা যায়, সীমান্তে বিজিবি’র টহলে কঠোরতা আনা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নাফনদীতে আগে স্পীডবোট নিয়ে মাঝে মধ্যে টহল দেয়া হত। এখন নাফ নদীতে জলযান নিয়ে সার্বক্ষনিক বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। ফলে আশা করছি, বাংলাদেশ সীমান্তে কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।
বিজিবি অধিনায়ক জানান, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যদি কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করে তাহলে বিজিবিকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। যেজন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এদিকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন সীমান্ত পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছেএব্যাপারে বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, পুরো সীমান্ত জুড়ে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের যাতে রোধ করা যায়। এছাড়া সীমান্তে কতগুলো অরক্ষিত পয়েন্ট রয়েছে, সেগুলোতেও সার্বক্ষনিক বিজিবির টহল মোতায়েন আছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে ইতিমধ্যেই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যার মধ্যে ইউএনএইচসিআর এর তত্ত্বাবধানে উখিয়া কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছে নিবন্ধিত ৩২ রোহিঙ্গা শরণার্থী। তবে চিহ্নিত এসব রোহিঙ্গার পাশাপাশি আরও তিন থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা এই দেশে অবস্থান করছে যাদের সঠিক সংখ্যা সরকার জানে না।
–
পাঠকের মতামত