প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার সরকারের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ৯টার কিছু আগে দুই সরকারপ্রধানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে এ কথা বলেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বৈঠক হওয়ার তথ্য দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, বৈঠকে মুহাম্মদ ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনের কাছে তুলে ধরেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেকোনো সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত। খবর বিডিনিউজের।
প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন এবং এরপরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক বাইডেনকে উপহার দেন।
জাতিসিংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বৈঠক।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের একজন কূটনীতিক বলেন, এর আগে কোনো বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হয়েছে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন, ওইদিন বিকালে তিনি অধিবেশনে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক কাল : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতিসংঘ সচিবালয়ে ওই বৈঠক হবে বলে বাসস জানিয়েছে।
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ওই অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায়।
বাসস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের দিন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং কুয়েতের যুবরাজ শেখ সাবাহ খালেদ আল–হামাদ আল–সাবাহর সঙ্গেও বৈঠক করার প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের।
আজ বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা এবং আগামীকাল নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কফের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
এছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এলডিসি, এলএলডিসি ও সিআইডিএসের উচ্চ প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবো, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, ইউএনডিপি প্রশাসক আখিম স্টেইনার এবং ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সোমবার ভোর ৫টায় ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা। দোহায় উড়োজাহাজ বদলে তারা নিউ ইয়র্কের জেএফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে। ঢাকা ত্যাগের সময় প্রচলিত রেওয়াজ ভেঙে বিমানবন্দরে আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে গেছেন ইউনূস। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই যাত্রা করেছেন নীরবে।
কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান জাতিসংঘের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধান উপদেষ্টা যান গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে এই হোটেলে তিনি ও তার সফর সঙ্গীরা থাকবেন। তিন দিনের সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পথে রওনা হবেন প্রধান উপদেষ্টা
পাঠকের মতামত