ছিলেন ইয়াবা জোন টেকনাফের ওসি। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাকে-তাকে তুলে আনতেন। পরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতেন। বনিবনা না হলে মাদককারবারি দেখিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শেষ করে দিয়েছেন অনেকের জীবন। তিনি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, যিনি এখন মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে রয়েছেন।
তবে এতো অপকর্মের পরেও অনুতপ্ত নন প্রদীপ; যদিও ফাঁসিতে ঝুঁলতে হবেই-- এমন শঙ্কা আছে তার মধ্যে।
সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে হত্যা করেন প্রদীপ। তার সঙ্গে ছিলেন টেকনাফ বাহারছড়া ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী। বরখাস্ত এই পরিদর্শকও কারাগারে রয়েছেন।
ওসি প্রদীপ এখন কোন কারাগারে? কীভাবে সময় কাটান? আগের অপকর্ম মনে করে তার মধ্যে কোনো অনুতাপ আছে কি না? রায় কার্যকর হতে কেন দেরি হচ্ছে? তার স্ত্রী চুমকি কারণ এখন কোথায়? এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা টাইমস সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওসি প্রদীপ কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে আছেন। একই কারাগারে আছেন পরিদর্শক লিয়াকত আলী। প্রদীপকে আলাদা কোনো সেলে রাখা হয়নি। কারাগারটি হাই সিকিউরিটি হওয়ায় প্রদীপসহ বেশ কয়েকজনকে একই সেলে রাখা হয়েছে। আর স্বামীর দুর্নীতির টাকা রক্ষা করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন স্ত্রী চুমকি। দুর্নীতির মামলায় ২১ বছর দণ্ডিত হয়ে তিনিও কারাগারে রয়েছেন।
হাই সিকিউরিটি কারাগারের ডেপুটি জেলার শেখ মো. রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রদীপ-লিয়াকত আমাদের কারাগারে আছেন। তাদেরকে কারাবিধি অনুযায়ী রাখা হয়েছে।’
কারাগারের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রদীপ জেল কোড অনুযায়ী ডিভিশন পেয়েছেন। যাতে তিনি সাধারণ বন্দিদের তুলনায় বেশি সুযোগ পান। বিশেষ করে খবরের কাগজ, উন্নত খাবার, ফ্যানসহ বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। মাঝেমধ্যে লাইব্রেরি থেকে বই আনেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি সপ্তাহে একবার আইনজীবী বা পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন।
গত বছরের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্য ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা হলেন- বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মা এবং পুলিশের সোর্স মো. নেজামুদ্দিন, নুরুল আমিন ও আয়াজ উদ্দিন।
অনুতপ্ত নন, তবে শঙ্কিত: কক্সবাজারের আদালতে রায় ঘোষণার আগে প্রদীপকে বেশ বিচলিত দেখা গিয়েছিল। কারাগারে তাকে তেমন অনুতপ্ত দেখা যায়নি বলে জানান একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘কখনও শুনিনি তিনি (প্রদীপ) পূর্বের অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন। তবে তিনি তো মানুষ। হয়ত মনে মনে ঠিকই করেন। তার সঙ্গে যেসব বন্দি আছেন তাদের কাছে মাঝেমধ্যে আক্ষেপ করেন; তার শঙ্কা আদালতের সবশেষ রায়ে তাকে ফাঁসিতেই ঝুলতে হয় কি না।’
প্রদীপ ‘নির্দোষ’ এবং ‘ত্রুটিপূর্ণ’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত: প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘প্রদীপ ও লিয়াকতের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের রায় এবং আদেশ সঠিক ও আইনসম্মত ছিল না। তাই তা বাতিল করা উচিত।
বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘এটাতে ডেথবুক রেফারেন্স তৈরিতে রয়েছে। বিস্তারিত আরও দেখে বলতে হবে।’
যত অপকর্মে প্রদীপ: স্ত্রী-সন্তানের জন্য অপকর্ম করে গড়েছিলেন সম্পদের পাহাড়। ক্ষমতার জোরে সৎবোন রত্না বালা প্রজাপতির বাড়ি পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিলেন এই প্রদীপ। স্ত্রী ও নিজের নামে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যবসাসহ সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে এই মামলায়ও ফেঁসে যান প্রদীপ দম্পতি।
কেন সিনহাকে হত্যা: ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ। প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী। সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গো’ নামের একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। সেসময় স্থানীয়রা সিনহার কাছে প্রদীপের অপকর্ম জানতে পারেন। বিষয়টি বেশিদূর যাতে না গড়ায় এজন্য সিনহাকে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্তেও উঠে এসেছে, এটা ঠান্ডা মাথার পরিকল্পিত হত্যা। সুত্র; ঢাকাটাইমস্