অবশেষে কক্সবাজারের রামু সরকারী কলেজে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর '১৫ আগস্ট/ জাতীয় শোক দিবস ২০২৩' এই একটি অনুষ্ঠান থেকে দেড় লাখ টাকা ব্যাংকে ফেরত পাঠানো হয়।
অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রায় দুই মাস পর ব্যাংকে টাকা ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের মাঝে নতুন করে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এর আগে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এ অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে কলেজের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়।
তবে বিষয়ে জানতে চাইলে রামু সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঝড়-বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান কাটছাট করতে হয়েছে।
এ কারণে প্রকল্পের পুরো অর্থ ব্যয় করা যায়নি। তাই টাকাগুলো ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
অতীতে অন্য কোনো অনুষ্ঠান বা প্রকল্পের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম আর কোনো প্রকল্প ছিলো না।
যদিও অধ্যক্ষের সঙ্গে অনুষ্টানটির আহবায়ক ও কলেজের গণিত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সুপ্রতিম বড়ুয়া বক্তব্যে মিল পাওয়া যায়নি।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মরণিকা বের করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে উঠেনি। এ জন্য প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, '১৫ আগস্ট/ জাতীয় শোক দিবস ২০২৩' এ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৩ লাখ ২ হাজার টাকা। কিন্তু চূড়ান্তভাবে এ খাতে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয় ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
নথির সম্ভাব্য খরচের বিবরণ মতে, এ অনুষ্ঠানের ১২ টি খাতের মধ্যে ব্যানার বাবদ ১২ হাজার টাকা, কালো ব্যাচ ধারণ বাবদ ৪ হাজার, ফুলের মালা ১২ হাজার, পুরষ্কার ক্রয় ২০ হাজার, পতাকা সংক্রান্ত ব্যয় ৪ হাজার, দেয়ালিকা ১০ হাজার, মঞ্চসজ্জা ১০ হাজার, ডেকোরেশন ১৫ হাজার, অতিথি ও ছাত্রছাত্রীদের আপ্যায়ন ও খাবার ১ লাখ ৫০ হাজার, সাউন্ড সিস্টেম ও মাইক ২০ হাজার, যোগাযোগ ১০ হাজার, ভ্যাট ১৫ টাকা হারে ও ট্যাক্স বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
তবে ওইদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুই শিক্ষক জানিয়েছেন, এ অনুষ্ঠানে ৫৫-৬০ জন শিক্ষক কর্মচারীকে খাসির মাংস ও ডিম দিয়ে দুপুরের খাবার ও ২৫ -৩০ জন শিক্ষার্থীকে নাস্তার প্যাকেট দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য চার ফুট বাই ৮ ফুটের ছাপানো হয় একটি ব্যানার।
সংস্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন এ খাতে সর্বসাকুল্যে ৪০- ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও বাস্তবে বিল করা হয়েছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কলেজের এক শিক্ষক জানান, অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রায় দুই মাস পর টাকা ফেরত দিয়ে অধ্যক্ষ নিজেই প্রমাণ করে দিলেন এখানে অনিয়ম হয়েছে। এটা নিয়ে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের মাঝেও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।
শিক্ষকেরা জানান, সম্প্রতি এসব অনিয়ম নিয়ে বাংলানিউজ এ দফায় দফায় সংবাদ প্রকাশ করা হলে গত গত ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠান বাবদ উত্তোলন করা ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। পরে অনুষ্ঠানের ব্যয বাবদ পুনরায় নতুন করে বিল ভাউচার তৈরী করা হয়।
এর আগে কলেজটির অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে দৈনিক কক্সবাজারসহ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এ অনুষ্ঠান নয়, বার্ষিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, এইচএসসি শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান এবং শিক্ষক পার্কিং শেড নির্মান, পার্কিং শেড রংকরণ, পার্কিং শেডে গ্রীল লাগানো, চাল মেরামত, ক্রোকারিজ সামগ্রী, সোফা ক্রয়সহ অধ্যক্ষের পছন্দের গুটি কয়েক শিক্ষকের নামে অর্ধশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত কোটি টাকা।
এছাড়াও বিভিন্নজনের নামে কাগজে কলমে এসব প্রকল্প দেখানো হলেও বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করেছেন অধ্যক্ষের ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন।
বেশিরভাগ প্রকল্পের আহবায়কেরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তাদের নামে চেক ইস্যু করে চেকে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও টাকা তারা চোখে দেখেননি। অধ্যক্ষ খরচ করে নিজের মত করে বিল ভাউচার সই নিয়েছেন।
এমনকি যাদের নামে কাগজে কলমে প্রকল্প দেখানো হয়েছে তাদের অনেককে এখন ভূয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন অধ্যক্ষ।