বৈশ্বিক মহামারী করোনার হানা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেকে যার যার গ্রামের বাড়ি এবং যেখানে বসবাস করবে হল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো, চাষ করা এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্বে কিন্তু আরো ভয়াবহ অবস্থা হবে। কোনো পয়সা দিয়েও খাবার পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে হবে। ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক ফোঁটা জমি ফেলে রাখা যাবে না। একটা ফলের গাছ লাগালেও লাগাতে হবে। করোনার কারণে বিশ্ববাপী অর্থনেতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রত্যেককে কিন্তু সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশগুলোতে পানির জন্য হাহাকার। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপে অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা। আমরা আগে থেকে যদি সাবধানে থাকি আমরা কিন্তু আমাদের অবস্থা সামাল দিতে পারব।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিজেদের সাশ্রয়ী হতে এবং অন্যকেও সাশ্রয়ী হতে উৎসাহিত করতে কাজ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে, স্বাধীনতার আদর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গড়ে উঠতে হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, নিজেকে গড়ে তুলতে হবে, যেন সঠিক নেতৃত্ব দেয়া যায়। ধনসম্পদ, টাকা-পয়সা কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগেনি। মাথায় রাখতে হবে, এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য। চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। গড্ডালিকা প্রবাহের মতো অর্থসম্পদের পেছনে ছুটলে অর্থ সম্পদে ভেসে যেতে হয়। এতে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা থাকে না। দেশকেও কিছু দেয়া যায় না, মানুষকেও দেয়া যায় না।
গ্রুপ বাড়ানোর জন্য খারাপ লোক দলে না ভেড়ানোর পরামর্শ দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া। আমি জানি, ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক অনেক কথা লেখা হয়। এত বড় একটা সংগঠন, তার মধ্যে কিছু কিছু তো...। আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই দলের ভেতরে ঢুকে যায়, নিজেরাই গন্ডগোল করে। বদনামটা হয় ছাত্রলীগের। গ্রুপ বাড়ানোর জন্য এ রকম আলতু-ফালতু লোক দলে ঢুকাবে না। তাতে নিজেদের বদনাম, দলের বদনাম ও দেশের বদনাম। কারণ আমাদের পিছে তো লোক লেগেই আছে, লেগেই থাকবে। ছাত্রদল কত অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কোনো কথা নেই, ছাত্রলীগের একটু কিছু হলেই বড় নিউজ। এ জন্য নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।
নেতাকর্মীদের পড়াশোনার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন, কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। সিক্রেট ডকুমেন্ট সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। সেটা পড়ে অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতির অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আমি দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আজকের প্রজন্ম ও পরবর্তী প্রজন্ম নিজেদেরকে প্রস্তুত করবে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগ, এরই সাথে তালমিলিয়ে শিক্ষায়-দীক্ষায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে, জ্ঞানের প্রয়োজন আছে, ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে এবং দূরদর্শী সম্পন্ন হতে হবে, এই দেশকে আমরা কি করব। এটা না থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে না।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলব, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে সাথে সাথে সে খবর আমাকে দিতে হবে। আমরা তাদের ঘর তৈরি করে দেবো। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন- এমনটি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের হাতে কাগজ-কলম-বই তুলে দিলাম, আগে লেখাপড়া করতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া জাতিকে কেউ সেবা দিতে পারে না। শিক্ষা আর জ্ঞান... জ্ঞানের আলো ছাড়া কাজ হবে কিভাবে। আমরা বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা করে দিয়েছি। এ সময় করোনাকালীন সময়ে ধান কাটতে শ্রমিক সঙ্কটের সময়ে কৃষকের পাশে থেকে ধান কেটে দেয়া এবং মানুষের পাশে থাকার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান আমাকে আসতে দিতে চায়নি, বাধা দিয়েছে। আবার যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ফিরে আসলাম তখন আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতেও ঢুকতে দেয়নি। আমি যে মিলাদ পড়ব, নামাজ পড়ব; সেই সুযোগও জিয়াউর রহমান আমাকে দেয়নি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তত বাংলাদেশের উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশে উন্নয়ন করেছিলেন। সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আমি পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি। ২০৪২ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ কেমন হবে, ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে; সেই ডেল্টা প্লান করে দিয়েছি। কাজেই আগামীতে যারা আসবে নিশ্চয় এটা অনুসরণ করলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।