গাজীপুরের মাওনায় লাইসেন্স ছাড়াই সেবার নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ‘শামা মেডিকেল সেন্টার’। এর সেবা নিয়ে রোগীদের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তেই প্রতিষ্ঠানটি। ডা. এম এইচ উসমানী নামে এক ব্যক্তির মালিকানায় হাসপাতালটি চলছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকায় নেই এই শামা মেডিকেল সেন্টারটি।
সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ রকম অসংখ্য বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে অভিযান। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধ হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে গত আড়াই মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৬ কোটি টাকা।
এ ছাড়া স্মরণকালে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এই সময়ে। আবারও গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকশনে যাচ্ছি আমরা। ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে চালানো হবে অভিযান। ’ তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার-বুধবার অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে গত বুধবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সারা দেশের সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের মিটিং হয়েছে। মে-তে অভিযানের পর প্রথম কয়েক দিন লাইসেন্স নবায়ন করার, নতুন লাইসেন্স নেওয়ার যে তোড়জোড় ছিল তার গতি এখন ধীর। সেটি সক্রিয় করার জন্য আবার ৭২ ঘণ্টার অ্যাকশনে যাব। ’
এর আগে ২৬ মে এক বিজ্ঞ?প্তির মাধ্য?মে সারা দেশের সব অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ নির্দেশনার পর স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সারা দেশে অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত আড়াই মাসে সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৬৪১টি অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একই সময়ে নতুন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এসেছে ১ হাজার ১০৩টি প্রতিষ্ঠান এবং লাইসেন্স পুনর্নবায়ন করেছে ২ হাজার ১৮১টি প্রতিষ্ঠান। নতুন লাইসেন্সের জন্য ২ হাজার ৩৩৯টি আবেদন জমা পড়েছে। লাইসেন্স পুনর্নবায়নের জন্য ৪ হাজার ৫৯৮টি আবেদন জমা পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে অথচ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সব শর্ত মানছে না, পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য তাদের তিন মাস সময় দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা নিয়ম মেনে লাইসেন্স পুনর্নবায়ন বা নতুন লাইনসেন্স নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই অভিযান চালানো হবে। দেশে এখন অনলাইনে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৪৩।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. বেলাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজ সকালে সারা দেশের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে মিটিং করে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হবে। তবে এ সপ্তাহেই ৭২ ঘণ্টার অভিযান পরিচালিত হবে বলে আশা করছি। ’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্স নিয়ে ১৯৮২ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে একবার নিবন্ধন নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আর তা নবায়ন করেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান শুরুতে ১০ শয্যার অনুমোদন নিলেও পরে শয্যা বাড়ালে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানায়নি। অনেকে শয্যার সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ায়নি জনবল। সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সম্প্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে ‘এসপিএ ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদনহীন ডিগ্রি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ আসে। ওই ঘটনার অনুসন্ধানে নেমে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেসবাহ ও তাঁর টিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হামলার শিকার হন। হাসপাতালের মালিক ডা. এম এইচ উসমানীর নেতৃত্বে ওই হাসপাতালে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় ক্যামেরা ও গাড়ি। পরে ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় মামলা করলে আটক হন ডা. এম এইচ উসমানী। সাময়িকভাবে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।