আলমগীর মাহমুদ :
রাজেন্দ্র আমার বাল্যবন্ধু। উখিয়া রত্না পালং ইউনিয়নে তার পূর্ব পুরুষের বসত। জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে যেয়ে পড়ালেখা আগায়নি বেশ দূর। গাড়ীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার পেশাই নিয়তির লিখন মেনে কক্সবাজার টেকনাফ রোডে আদমীর সেবায় কাটিয়েছে জীবনের সিংহভাগ।
হঠাৎ দেখি রাজেন্দ্র চাকরী পাল্টায়। এন,জি,ওর কর্তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর কর্ম শুরু করে। তাও আবার যেন তেন কর্তা নয় ইংরেজ।
তবে আগে যাহ পাত্তির দৌরাত্ম্য ছিল মাস মায়নায় ইনকাম আগের চেয়ে কম। তারপরও তার নেই দু:খ, অভিযোগ, অভিদোষও। বেশী ইনকামের মওকা ফেলে কমে তার সন্তুষ্টি আমাকে বেশ কৌতুহলী করে।
১৯৮৩ ব্যাচের পিকনিক। ইনানীর নির্জনে তে সে আর আমি। কৌতুহল নিবারনে হলাম একান্ত। সে আমারে জানায় মেয়েটা ইংরেজির অনার্সে। ছেলেটা শ্রীলংকায় পাঠ শেষে বৌদ্ধ সমিতির সহযোগিতায় ফ্রান্সে পড়ে।
ভাবলাম বিয়াই বিয়াইন ইংরেজ ও হতে পারে। পড়ালেখা কপালের লিখনে হারালাম। যদি নিজেরে বিয়াই বিয়াইনের সাথে এডজাষ্ট দেখাতে না পারি ছেলেটা ও হারানোর ভয়।
নিজেরে আপডেট করনের কর্ম করণীয় ভেবে পাত্তি ইনকামের চেয়ে সভ্য অওন উত্তম ভাবনায় আছি। কিছু মিলাইতে পারছিলাম না।বয়স বাড়ছে। মিলানোর মত পূঁজিও যদি না থাকে পরিবার থেকে out..হয়ে ভীষণ অভিশাপময়তা আঁচ করছিলাম।
হঠাৎ মনে হইল সৌদিয়ায় পাড়ি দিয়ে, অক্ষর জ্ঞান না জানা মানুষ যদি আরবী রপ্ত করে সৌদি তাবিয়ায় সৌদিয়ার শেখ বনতে পারে।আমি কেন পারব না।
ভাবনা জানিয়ে দিল টেকনাফ লাইন ছাড় এম,এস,এফ এর দিকে ইংরেজ সাহেবের সাথে মিশ। শিক্ষা দেখা শুনায়। অভ্যাস পাল্টাওনে।
ইংরেজদের সাথে আছি দশবছর ।লৌহার বন্ধুত্ব যদি চুম্বকের সাথে হবার সুযোগ ঘটে। লৌহাও চুন্বকে পরিণত হয়।সে আমারে বেশ নান্দনিক হাসি দিয়ে কয়,’আমারে তুঁই এখন ক্ষুদে ইংরেজ ভাবতে পারস!
তোর মতো প্রফেসার যদি ইংরেজ জাতির কোন পার্টির দাওয়াতে যাস,তুই বই পড়ে যাহ শিখছিস কোনটাই মিল খোঁজে পাবি না।পারবি না সঠিক মিলাইতেও।
বইয়ের বিদ্যার সাথে র্চ্চা র যদি রিহার্সেল সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষের সাথে না হয় বইয়ের বিদ্যায় হাসিল দূরূহ। সেদিনের একটা ঘটনার বর্ণনা যদি শুনছ অবাক হবি।
সেদিন সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী এম,এস,এফ চাকুরে ডাক্তারের ফেয়ারওয়েল ছিল।পার্টির আয়োজন হয়।সর্ব্বোচ্চ বিদেশী সার্টিফিকেটধারী বাঙ্গালী থেকে চুইপারও হয় আমন্ত্রিত।বিদেশী, সাথে বিদায়ী ও।
খাবার শুরুর সাথে সাথে বিরানীর প্যাকেটের উচ্ছিষ্ট, পানির খালি বোতল, কেকের টিস্যু পর্যন্ত কেউ আমরা উচ্ছিষ্টের ঝুড়িতে নিদিষ্ট স্থানে না ফেলে কেউ টেবিলের নীচে।কেউ পাশে। কেউ আবার খাবার টেবিলে।আর কেউ এদিক সেদিক ছুঁড়ে ফেলে।আমাদের এই অবস্থা তারা শ্যেনদৃষ্টিতে নজর রেখে নিজের খাবারও চালিয়ে নেয়।
সবাইর খাবার শেষ হলে সুইজারল্যান্ডের যে ডাক্তারের বিদায় উনি গিয়ে একটা বড় বাস্কেট নিয়ে আমরা যে যাহা যেখানেই ফেলেছি, সবটি এক এক করে বাস্কেটে নিজ হাতেই নেন পুরে। এমন কি আমাদের ছুঁড়ে ফেলা শেষ বোতলটিও পড়েনি বাদ।
কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চাইলেও স্মাইলের কৌশলে দিয়েছে বসিয়ে।সে বিদায়ী জন একাই সব বাস্কেটে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আমাদের থ্যাংক ইউ ” জানায়।
এটি ছিল সবাইর জন্য ভীষম এক লেছন।উনার কূঁড়িয়ে নেয়ার সময়টাকে যদি ক্লাশ টাইম ধরে নেই এককথায় সে সময়টা ছিল আমাদের জন্য খুবই কঠিন’।
দজলা ফোরাতের তীরে ইমাম হোসেনের বুকে বসে সীমারের খঞ্জর চালনার চেয়েও ভারী, ভয়াবহ বেদনাবিদূর, যাতনাময়।সেদিনই আমার মরমে বিষাদে ধ্বনিত হল নুতন চিন্তা …অভ্যাস অভ্যাসে’..’অভ্যাস অভ্যাসে’।
লেখক:– বিভাগীয় প্রধান।সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।
alamgir83cox@gmail. com