সরওয়ার আলম শাহীন::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং সরকারী বনভূমি দখল করে ঝুপড়ি বেঁধে নতুন করে আসা ২৫ হাজার রোহিঙ্গাসহ প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জীবন-জীবিকার তাগিদে অবাধভাবে বিচরণ করতে পেরে তারা কোন না কোন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এককথায় রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কারনে প্রতি রাতে গ্রামগঞ্জে চুরি- ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার বনবিভাগের জায়গায় ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করতে গিয়ে বকর্মীদের উপর রোহিঙ্গাদের গুলিবর্ষনের গটনা ঘটেছে।এতে ১৫ বনকর্মী আহত হযেছে।গত সপ্তাহে পালংখালী ইউনিয়নের থাইনখালী ষ্টেশনে একসাথে ১৪ টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে।প্রতিদিনই অনাকাংক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি উখিয়া আশেপাশে।রোহিঙ্গাদের হাতে অস্ত্র থাকার অভিযোগও রয়েছে।ক্যাম্প ও বস্তি এলাকায় উৎপেতে থাকা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলার আইনশৃংখলা পরিস্তিতির অস্তরায় হয়ে দাড়াতে পারে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাই এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রন না করে গুটি কয়েক পুলিশ প্রহরায় রাখার কারনে রোহিঙ্গা বস্তি সম্পূর্ণ অরক্ষিত বলে দাবী করছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।
জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসরত প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে সরকার অবৈধ ঘোষনা করে তাদের রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় নেয়নি। এসব রোহিঙ্গারা বনবিভাগের জায়গায় ঝুপড়ি বেধে বসবাস করে আসছে কয়েক বছর ধরে। সম্প্রতি তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী,পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরানার্থী। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গারা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের লক্ষে ক্যাম্পে দায়িত্বরত পুলিশকে দৈনিক চাঁদা দিয়ে প্রতিদিন ভোর সকালে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরছে কিনা তা নিয়ে পুলিশের মাথা ব্যথা নেই। আর রাতে এসব রোহিঙ্গারা ভয়াবহ অস্ত্রবাজি,সংঘর্ষ, ডাকাতি সহ আইনশৃংখলা বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কারনে উখিয়ার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, বসতবাড়ীর হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল ও মূল্যবান মালামাল রোহিঙ্গারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সড়ক ও দোকান বসতবাড়ী ডাকাতির ঘটনায় রোহিঙ্গারা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। কুতুপালং পশ্চিম পাড়া গ্রামের আফাছ উদ্দিন (৫০) বলেন, রোহিঙ্গারা মহিলারা দিনের বেলায় কাজের অজুহাতে এসে বসতবাড়ীর অবস্থান জেনে নিয়ে রাতে অভিনব কায়দায় চুরি সংঘটিত করে। এভাবে এ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামগঞ্জে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসীর ঘটনা ঘটছে। গত সপ্তাহে পালংখালী ইউনিয়নের থাইনখালী বাজারে একসাথে ১৪ দোকারেন চুরির ঘটনায় রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতার অভিেেযাগ এনেছেন স্থানীয়রা।এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার বনবিভাগের জায়গায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করতে নিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা,বিট কর্মকর্তাসহ বনবিভাগের ১৫ কর্মী। রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন,রোহিঙ্গাদের হাতে অস্ত্র রয়েছে,তাদের উপর রোহিঙ্গারা গুলি চালিয়েছে।দা,কিরিস সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে রোহিঙ্গারা। এতে সে নিজে সহ বিট কর্মকর্তা আবদুল মান্নান, উয়ালাপালং বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস, উখিয়ার ঘাট বিট কর্মকর্তা মোবারক আলী, মোছার খোলার বিট কর্মকর্তা মাসুদ সরকার, দোছরী বন বিট কর্মকর্তা আমির হোছন গৌজনবী, উখিয়া সদর হেডম্যান মোঃ ইব্রাহিম, বনকর্মী তরিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহ জাহান সহ ১৫ জন আহত হয়েছে।স্থানীয় মেম্বার বখতিয়ার আহমদ অভিযোগ করে বলেন, কুতুপালং ক্যাম্পে মোঃ কালু প্রকাশ মই¹া, ভুট্রো, মুরগী নুর আলমের ছেলে প্রায় ১ ডজন অস্ত্রধারী ডাকাত রয়েছে। অতীতে ক্যাম্পে অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেছে ,কিন্ত অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়নি। তাছাড়া সীমিত সংখ্যক পুলিশ দিয়ে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই এসব রোহিঙ্গারা রাতে বাসা-বাড়ীর হাঁঁস-মুরগী, গৃহপালিত গর-িছাগল সহ বসতবাড়ীর নিত্য ব্যবহার্য মালামাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় এখানে কেউ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।এসব রোহিঙ্গাদের কারনে আমরাও অনিরাপদ অবস্থায় দিনানিপাত করছি। এব্যাপারে ক্যাম্প ইনচার্জ আরমান শাকিল বলেন, রেজিষ্টাষ্ট রোহিঙ্গারা যাতে খোলামেলা অবাধে চলাফেরা করতে না পারে সেব্যাপারে সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। অনিবন্ধিত বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গারা অপরাধমুলক কমৃকান্ডে জড়ালেও তার কিছুই করার নেই।
পাঠকের মতামত