মিয়ানমারের অর্ধেকের বেশি ভূখণ্ডের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ এখন জান্তাবিরোধীদের হাতে। গতকাল শুক্রবার রাতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। একই সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে ছয় ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। মিয়ানমারের জনগণের আত্মরক্ষার বিপ্লবের বার্ষিকী উপলক্ষে এনইউজি ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
এতে এনইউজির প্রতিনিধিরা মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের বিভিন্ন দিক ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে এনইউজির তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী টিন লিন অং বলেন, তাঁদের কাছে এমন অস্ত্র আছে যা দিয়ে বিমান ধ্বংস করা যাবে। তিনি বলেন, ‘বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রগুলো বিভিন্ন জায়গায় বসানো আছে। আমি বলছি না, সেগুলো কোথায়। তবে যদি যুদ্ধবিমান আসে, তাহলে সেগুলো গুলি করে নামানো হবে। ’ যদিও এনইউজির কাছে কী ধরনের অস্ত্র আছে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে এনইউজি বিমান হামলা ঠেকাতে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ার চেষ্টা করছিল।
এনইউজির মন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, যে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারগুলো এখন মিয়ানমারের জনগণের ওপর গোলাবর্ষণ করছে, একদিন সেগুলোর পাইলটদেরও বিচার হবে।
এনইউজির কর্মকর্তারা বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এনইউজি ও বিপ্লবী বাহিনীগুলো উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। রাজনীতি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ, প্রশাসন ও যুদ্ধের মাঠেই কেবল সাফল্য নয়, তারা ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সবাইকে নিয়ে একটি গণতন্ত্র উপহার দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ‘‘এনইউজি নিয়মতান্ত্রিক সামরিক বাহিনী ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ সৃষ্টি করেছে। এটি কেবল আত্মরক্ষাই নয়, আমাদের মিত্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতায় সন্ত্রাসী সামরিক কাউন্সিলের সেনাবাহিনীকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারে। ”
এনইউজির প্রতিনিধিরা বলেন, এনইউজি ও মিত্র নৃগোষ্ঠীগুলো মিলে আজ সারা দেশের ৫০ শতাংশেরও বেশি এলাকায় কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণ সম্ভাব্য সব উপায়ে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ছে। জান্তার প্রশাসন কাঠামো ধসে পড়ছে। এর ফলে জাতীয় বাজেটে টান পড়ছে। মূল্যস্ফীতি ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। মুদ্রার মান কমছে। জনগণের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনইউজির প্রতিনিধিরা বলেন, বিদেশ থেকে মিয়ানমারের জান্তার কাছে অর্থ পৌঁছানো ঠেকাতে এনইউজি সম্ভাব্য সব কিছু করবে। জান্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমতের কারণে এনইউজির আর্থিক ও বৈপ্লবিক প্রয়োজনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
এনইউজির কর্মকর্তারা বলেন, যারা জান্তার সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল তারা এখন পালাতে শুরু করেছে। সামরিক বাহিনী বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরাজয় আড়াল করার চেষ্টা করছে। জনগণের বিরুদ্ধে জান্তা আরো কঠোর হচ্ছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জান্তা ২০২৩ সালে মিয়ানমারে যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে তা কেউ মেনে নেবে না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে নির্মূল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে আরো সুসংহত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স ও সম্মিলিত মিত্র বাহিনী গঠন, প্রশাসনিক কাঠামো বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমারের বিপ্লব তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে।
এনইউজির প্রতিনিধিরা বলেন, জান্তার সামরিক কাউন্সিলকে রাজনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক ও আইনিভাবে পরাস্ত করাই শুধু নয়, সামরিক কাঠামোকে ধ্বংস করা সম্ভব। জনগণের প্রতিরোধের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। জান্তা যাতে তাদের পিছু হটার পরিকল্পনা করতে না পারে সে জন্য এনইউজি ও মিত্র বাহিনীগুলো ছয়টি ফ্রন্টে সর্বাত্মক যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এনইউজির প্রতিনিধিরা জানান, গত এক বছর ছিল তাদের বিপ্লবের ভিত্তি। আগামী বছর তারা বিপ্লবের ফল পাওয়ার চেষ্টা করবে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এপ্রিলে এনইউজি গঠিত হয়। মিয়ানমারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই সরকার মূলত কাজ করছে প্রবাসী সরকার হিসেবে। তবে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন গোষ্ঠী এনইউজিকে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার হিসেবে মেনে নিয়ে জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
পাঠকের মতামত