নিজস্ব প্রতিবেদক,মহেশখালী::
মহেশখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপিও অঙ্গ সংগঠন এখন চরম অস্তিত্ব সংকটের মূখে পড়েছে। যোগ্য, দক্ষ, রাজনৈতিক মেধাবী সাহসী নেতৃত্বের অভাবে বিরোধী দলের এ অবস্থা দেখা দিয়েছে মহেশখালীতে। উপজেলা বিএনপির সভাপতির অবহেলার কারনে বিগত সময় সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে বেকায়দায় ছিল বিএনপিও তার অঙ্গ সংগঠন। অফিস কেন্দ্রিক কর্মসূচীতেই সীমাবদ্ধ ছিল দলটি। প্রায় ৪ বছর পূর্বে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হই এড. নূরুল আলম। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে মাঠে থাকেন না তিনি। এ অস্থায়— তখন থেকে দলীয় সভাপতির ভূমিকা নিয়ে হতাশা ও অসন্তোজ বিরাজ করছিল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের মাঝে।
জানা গেছে, গেল ইউপি নির্বাচনে এড.নুরুল আলম অর্থের বিনিময়ে পছন্দের নিস্ক্রিয় নেতাদের সুপারিশ করে দলীয় ব্যানারে নির্বাচনের টিকিট পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় গেল ইউপি নির্বাচনে একটি আসনের জয় হতে পারেনি বিএনপি তথা ধানের শীষের প্রার্থীরা। জেলা বিএনপির নেতারা মহেশখালীতে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্টা করতে ব্যর্থ হয়। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন এখন রাজনৈতিক শূন্য একটি দলে পরিণত হয়েছে। দলকে সু-সংগঠিত করতে হলে অবশ্যই যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। অন্যথায় এ দলটি ও অঙ্গ সংগঠন ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় মুখে পড়তে যাচ্ছে নিঃ সন্দেহে বলা যায়। মহেশখালী রাজনীতির মাঠে ময়দানে বিএনপির কোন কর্মকান্ড দেখা না গেলে ও মাঝে মধ্যে জেলা নেতৃবৃন্দের আগমনে স্থানিয় নেতা কর্মীরা কিছুটা সরব হয়ে উঠে।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বলতে গেলে বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের মহেশখালীর অভিবাবক হওয়ার সত্বেও এড.নুরুল আলমের অবহেলায় দুঃখজনক মন্তব্য করে যুবদল নেতা শফি ও পিয়ারু বলেন আমরা উপজেলা বিএনপির সভাপতিকে অনেকবার বলেছি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির মাঠে থাকার জন্য-যেভাবে অন্য উপজেলার সভাপতিরা রয়েছেন। যুবদল-ছাত্রদলের নেতারা ও বলেছেন। তার পর ও তিনি মাঠে আসেননি।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ঘোষিত কোন কমসূচিতে তিনি যোগদান না করে নিজের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন আদালতে। উপজেলা সভাপতি ঘুমিয়ে থাকায় মহেশখালী ইউনিয়ন গুলোতে যুবদল-ছাত্রদলের কোন কমিটি নাই বললে চলে। বিএনপির কমিটি কাগজে কলমে থাকলে ও অনেক ইউনিয়নে সভাপতি সম্পাদক এলাকার বাইরে থাকেন দীর্ঘদিন। এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন না সভাপতি এড. নুরুল আলমের মত সুবিধাভোগি নেতারা।
অপরদিকে মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সভাপতি মকছুদুল আলম নিরু গত ৭ মাস পূর্বে সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে সকল এলাকায় কর্মী শূন্যতা সৃষ্টি করে। গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশিদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিতে দিতে সাধারণ নেতা কর্মীরা ফেরাশন হয়ে নিস্বক্রিয় হয়ে গেলে ও অদ্যবধি কোন ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করা হয় নাই বলে জানালেন ইউনিয়ন যুবদলের নেতা কর্মীরা। যার কারনে রাজ পথে আন্দোলন সংগ্রমে সক্রিয় নেতা কর্মীদের মনে ব্যাপক সন্দেহের অবকাশ সৃষ্টি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অনেকে নিস্বক্রিয় হয়ে গুটিয়ে রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আজিজুল করিম জয়কে সভাপতি ও মোঃ আরাফাত রিয়াদকে সিনিয়র-সহ সভাপতি, মুরশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক, সালাহ উদ্দিনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে মহেশখালী উপজেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রদল। কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি আজিজুল করিম জয়ের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে ছাত্র দলের কার্যক্রম অনেকটা চাঙা ছিল। সর্বশেষ বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ নিখোঁজ নিয়ে আজিজুল করিম জয়ের নেতৃত্বে মিছিল মিটিং সরব ছিল রাজপথ। বিগত সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে বর্তমান স্থগিত কমিটির সভাপতি ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের নিয়ে মাঠে ময়দানে সরব থাকলেও শীর্ষ পদে থাকা সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ আলমও সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহ উদ্দিনসহ অনেকে মাঠে ময়দানে না থাকায় মহেশখালী ছাত্রদলের কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। তাই জেলা ছাত্র দলের নেতারা উক্ত কমিটি স্থগিত করে দেন।
তৃণমূলের নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন, বিগত সময় এড. নুরুল আলম সভাপতি জয়কে বাদ দিয়ে সম্পাদক মুরশেদ আলম তার কর্মচারির ভূমিকা রাখায় তাকে ইউনিয়ন ছাত্র দলের কমিটি করার দায়িত্ব দেন। সেখানে সভাপতি আজিজুল করিম জয় তৃণমূলের ছাত্রদলে যোগ্য রাজপথের সংগ্রামী নেতারা পকেট কমিটি হলে ছিটকে পড়ার আশংকায় বাঁধা সৃষ্টি করে। এর পর শুরু হয় গ্রুপিং। ফলে দুইটি বিশাল গ্রুপের জন্ম হয় একটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সভাপতি আজিজুল করিম জয় অন্যটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ আলম। এভাবে দুইটি গ্রুফ একে অপরের সাথে দা কুমডার মতো সম্পর্ক সৃষ্টি করতে থাকেন। তবে তৃর্ণমূলে নেতা কর্মীদের নিয়ে পাল্লা ভারী রয়েছে সভাপতি আজিজুল করিম জয়ের। কিন্তু নেতা কর্মীর শুন্যে অবস্থানে ভোগছেন সম্পাদক মুরশেদ আলম। এমনকি অভিযোগ রয়েছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রদল কয়েকবার মহেশখালীতে এসে গ্রুপিং নিরসনের চেষ্টা চালায় যা তারা মহেশখালী ছাড়ার পর পর আবার শুরু হয়। তবে মহেশখালীর মতো বিএনপির দূর্গে এমন কমিটি নিয়ে হতাশ জেলা ছাত্র দল। তবে নেতাকর্মীরা দাবী করছেন তাদের কথা চিন্তা করে জেলা ছাত্রদল ও উপজেলা বিএনপি অতীত মনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে মুরশেদ আলম ও সালাহ উদ্দিনকে সরিয়ে দিয়ে যারা রাজ পথে আন্দোলনে সংগ্রামে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকার রেখেছেন তাদেরকে নিয়ে সময় উপযোগী একটি শক্তিশালী কমিটি ঘোষনা দিবেন।
অপরিদকে অভিযোগ রয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন অ-ছাত্র ৪র্থ শ্রের্নী পর্যন্ত পড়ালেখা করেননি। তিনি একজন বনদস্যু। বনদস্যুদের সাথে আঁতাত করে সরকারী বনায়নের মূল্যবান গাছ চুরি করে। উপজেলা বিএনপির সভাপতিকে চুরিকৃত গাছ দিয়ে বসকাট, আলনা, আলমারি বানিয়ে দিয়ে খুশি করে সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার গৌরভ অর্জন করেছেন বলে ও জনশ্রুতি আছে এলাকায়।
জানা গেছে, গেল ইউপি নির্বাচনে হোয়ানক ইউনিয়ন থেকে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী এনামুল করিম ধানের শীষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন সম্পাদক মুরশেদ আলমের আপন ভাই মাহবুব আলম। সে সময় মুরশেদ আলম ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনায় অংশ না নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনায় নামে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে তাকে বহিস্কার করে জেলা কমিটি। ধানের শীষের প্রার্থী এনামুল করিম অভিযোগ করলে ও সম্পাদক মুরশেদের সাথে এড. নুরুল আলম, জেলা বিএনপির সিনিয়র-সহসভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী ও জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন পদস্থ নেতারা তার পক্ষ থাকায় সংগঠন বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকলে ও তাকে আদৌও বহিস্কার কিংবা সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তৃণমূলের ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার সত্বে ছাত্র দলের একজন কর্মী জানান, বিএনপির সভাপতি এড. নুরুল আলম আদালতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করার সময় সহযোগি হয়ে সম্পাদক মুরশেদ আলম আদালতের মুন্সির ন্যায় ফাইল নিয়ে সময় অতিবাহিত করেন। তিনি আরোও জানান নুরুল আলম কোন কাজে কক্সবাজার শহরের গেলে হোটেলের রুম বুকিং, কোর্টের ফাইল বহন, বাড়ির মাছ-তরকারী কিনে বাড়ী দিয়ে আসাসহ বিভিন্ন কাজে কর্মচারী ভূমিকা রাখেন ছাত্র দলের সম্পাদক মুরশেদ আলম। মুরশেদ আলম উপজেলা বিএনপির সভাপতির আস্থাভাজন ও কর্মচারির ভূমিকা রাখায় নতুন ছাত্রদলের কমিটি হলে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রাখতে নুরুল আলম মরিয়া হয়ে লেগে আছে। যার কারনে জেলা ছাত্র দল নতুন কমিটি দিতে পারতেছেনা মহেশখালীতে। একজন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. নুরুল আলম, যুবদল সভাপতি মকছুদুল আলম নিরু ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ আলমের জন্য আজ ধ্বংসের দ্ধারপান্তে মহেশখালী উপজেলা বিএনপি ও ছাত্রদল।
মহেশখালী বিএনপির সভাপতি এড. নুরুল আলমকে অবসর দিয়ে নতুন করে যদি উপজেলা বিএনপির কমিটি ঢেলে সাজানো না হয় নিশ্চিত ভবিষ্যতে মহেশখালীতে বিএনপিও অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতা কর্মী খোঁজে পাওয়া অনিশ্চিত হতে পারে। হারিয়ে যাবে দেশের বৃহত্তম সংগঠন বিএনপি অঙ্গ সংগঠন মহেশখালী থেকে।
এ বিষয়ে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. নূরুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভাব হয়নি।
জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আজিজুল করিম জয় বলেন, আমি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের অনুসারী হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিটি ঘটন করতে গেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড.নুরুল আলম সম্পাদক মুরশেদ আলম আলমগীর ফরিদের এজেন্ড বাস্তবায়ন করার লক্ষে আমাকে বাঁধা সৃষ্টি করে। তিনি আরোও বলেন, ছাত্রদলকে গতিশীল করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে ছিলাম আছি থাকব।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল বলেন, সভাপতি আজিজুল করিম জয় ও সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ আলমের মধ্যে দলের ভিতর কোন গ্রুপিং আমার জানা নাই। থাকলে এটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। তারা দুইজনই জেলার বিভিন্ন মিটিং এ অংশ গ্রহণ করেন। তিনি আরোও জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে ছাত্রদলের কমিটি হচ্ছে সে প্রক্রিয়া কিছুদিনের মধ্যে মহেশখালীতে ছাত্রদলের শক্তিশালী কমিটি ঘটন করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, অবৈধ সরকারের রোষানলে পড়ে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়েছিল, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. নুরুল আলমের অবহেলার কারনে মহেশখালী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন বলে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন নেতা কর্মী অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত