নভেম্বরের শেষ দিকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরুর কথা থাকলেও যাত্রী সংকটে তা সম্ভব হয়নি। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে জাহাজ চলাচল। এরই মধ্যে পর্যটকদের নিবন্ধন বা ট্রাভেল পাস দিতে সম্পন্ন হয়েছে অ্যাপ তৈরি।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বলছে, অ্যাপের এজেন্ট থাকবেন জাহাজ মালিকেরা। যার ফলে বাইরের কেউ এই অ্যাপ ব্যবহার করে যাত্রীদের জিম্মি করতে পারবে না।
গত ২২ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নভেম্বরে রাতে সেন্টমার্টিনে থাকতে পারবেন না পর্যটকেরা। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুই হাজার পর্যটক প্রতিদিন যেতে পারবেন, রাতেও থাকতে পারবেন। আর ফেব্রুয়ারিতে কোনো পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন না, তখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে।’
এরপর, চলতি নভেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। অনুমোদন দেওয়া হয় শুধু কেয়ারি সিন্দাবাদকে। তবে যাত্রী সংকটের কারণে তা আর শুরু হয়নি।
মালিকপক্ষ বলছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে জাহাজ চলাচল। মূলত নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার অনুমোদন না থাকার কারণেই যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
কেয়ারি সিন্দাবাদের কক্সবাজার ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে পর্যটন নিয়ে তাদের জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যাবে।’
এদিকে, ট্যুর অপারেটররা বলছেন, ডিসেম্বর মাসের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু অ্যাপ জটিলতার কারণে মিলছে না ট্রাভেল পাস।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাপ তৈরি শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে তা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ দ্রুত ট্রাভেল পাস পাওয়া যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
ট্রাভেল পাস নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য করা অ্যাপের এজেন্ট থাকবেন জাহাজ মালিকেরা। যখন টিকিট ইস্যু করা হবে তখন টিকিটের বিপরীতে একটি ট্র্যাভেল পাস দেওয়া হবে।’
আবু তাহের বলেন, ‘বিনা মূল্যে ট্রাভেল পাস পাওয়া যাবে। কেউ যাতে এই ট্রাভেল পাস নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করতে না পারে সেজন্য জাহাজ মালিকদের মাধ্যমে অ্যাপ পরিচালনা করা হবে।’
তবে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের স্থানীয়দের যেতে কোনো ট্রাভেল পাস লাগবে না বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উল্লাহ নিজামী। তিনি বলেন, ‘শুধু স্থানীয়রা টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোনো ট্রাভেল পাসের দরকার হবে না।’
আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, ‘কোনো পর্যটককে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে দেওয়া হবে না। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রায়ই এসে গোলাবারুদ পড়ে। পর্যটকদের নিরপত্তার কথা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।’
গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
গতবছরের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটন জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়।