বাগদাদ: প্রায় এক বছর পর ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কবল থেকে একজন ডাচ মুসলিম তরুণীকে তার দুই শিশু সন্তানসহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ওই নারীর নাম লরা অ্যাঞ্জেলা হ্যানসেন (২১)। তার দুই ছেলে ইমাম (৪) এবং এক বছর বয়সী আব্দুল্লাহ। মসুল শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আইএস জঙ্গিদের আর্টিলারি গোলাবর্ষণে তার দুই শিশু সামান্য আহত হয়েছে।
কুর্দি বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট গত মঙ্গলবার ইরাকের মসুল থেকে তাকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর ওই মুসলিম নারীকে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়।
উদ্ধারের পর কুর্দি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে লরা অ্যাঞ্জেলা হ্যানসেন জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তুরস্কে ছুটি কাটানোর কথা বলে তার স্বামী প্রতারণা করে তাদের আইএস নিয়ন্ত্রিত রাক্কা শহরে নিয়ে যায়।
কুর্দিস্তান২৪কে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় ওখান থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করেছি। আমাকে নিরাপদে উদ্ধার করায় মহান আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একইসঙ্গে কুর্দি পেসমেরগা উদ্ধারকর্মীদেরকেও।’ আইএস যোদ্ধারা কুর্দিদের ‘অত্যন্ত কঠিন মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেন বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, পেশমেরগা যোদ্ধারা আমাকে সবকিছু দিয়ে সাহায্য করেছে। তারা খুব ভালো লোক। আইএসের কবল থেকে উদ্ধার হওয়ায় আমি খুব খুশি।
গত মঙ্গলবারের ওই উদ্ধার অভিযানে ওই নারীর পিতাও অংশ নেন। তিনি মসুল শহরের ভিতরে ঢুকে তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
লরা অ্যাঞ্জেলা হ্যানসেন বলেন, ‘মসুলে আমার সন্ধান পাওয়ার পর আমার বাবা পেশমেরগা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পেশমেরগারা তাকে জানান, অপহৃতদের মসুলের বাইরে নিয়ে আসার জন্য তাদের লোক রয়েছে। তারা মসুল থেকে অপহৃতদের উদ্ধার করে কুর্দিস্তানে পৌঁছে দেবে।’
হ্যানসেন জানান, তিনি সুইজারল্যান্ডের হেগ শহরে জন্মগ্রহণ করলেও বাস করতেন জোয়েটারমেয়ার শহরে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন এবং বয়স ১৭ হওয়ার পর থেকে তিনি ধর্মানুশীলন শুরু করেন।
তিনি আরো জানান, তার স্বামী একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক। একটি মুসলিম ডেটিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি তার স্বামীর সাক্ষাৎ পান এবং পরবর্তীতে তার দ্বারা গর্ভবতী হন।
তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী থাকায় আমার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ চাইনি।’
সন্তান জন্ম দেয়ায় এই দম্পতিকে ‘সোসাল সার্ভিস’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের একটি বাড়ি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ছুটি কাটাতে তারা তুরস্কে ভ্রমণ করেন।
কুর্দিস্তান ২৪কে তিনি বলেন, ‘তুরস্ক থেকে সিরিয়া সীমান্ত খুব বেশি দূরে ছিল না। আমরা একটি বাসযোগে তুর্কি সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় যাই। ওই সময় আমি কালো বোরকার সঙ্গে হিজাব পরিহিত অবস্থায় ছিলাম।’
হ্যানসেন বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল যে, সহায়তার অর্থ বিতরণ করতে আমরা শরণার্থী শিবিরে যাচ্ছি কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম আমাকে কৌশলে সিরিয়ায় প্রবেশ করতে প্ররোচিত করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন,‘আমার স্বামী আমাকে সিরিয়া যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তারপর আমরা সিরিয়া হয়ে রাক্কা শহরে পৌঁছাই। সেখানে পৌঁছানোর পর আইএস যোদ্ধারা আমাদের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। এটা পুরুষ রক্ষিদের দ্বারা সুরক্ষিত থাকায় আমরা বাইরে যেতে পারতাম না।’
যদিও ডাচ কর্তৃপক্ষ ওই নারীর নাম নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে নেদারল্যান্ডের একজন নাগরিক ইরাকি দূতাবাসে গিয়ে সহায়তা চেয়েছে বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
লরা অ্যাঞ্জেলা হ্যানসেন তৃতীয় পশ্চিমা নাগরিক হিসেবে আইএসের নিয়ন্ত্রণ থেকে অব্যাহতি পেল।
এর আগে গত মার্চ ফিলিস্তিন বংশোদ্ভুত মোহাম্মদ জামাল (২৬) নামে একজন আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবককে আইএসের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়ার পর তিনি জানান, তিনি ভাগ্যবান যে, তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়নি। আইএসের ফ্রন্টলাইন অবস্থান থেকে পালিয়ে আসার পর তাকে নোম্যানস ল্যান্ড থেকে উদ্ধার করা হয়।
মসুলের নিকটবর্তী একটি এলাকায় তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএসের তথাকথিত খিলাফতের মধ্যে মানুষের জীবন খুব খারাপ অবস্থায় আছে।
ভার্জিনিয়া থেকে ফৌজদারি আইনে গ্র্যাজুয়েট লাভ করা ওই যুবক বলেন, আইএস ইসলাম ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমি তাদের ভাল মুসলিম হিসাবে কখনো বিবেচনা করি না।
এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে মারলিন স্টিভানি নিভারলেইন নামে ১৫ বছর বয়সী এক সুইডিশ তরুণীকে কুর্দিদের একটি বিশেষ বাহিনী আইএসের কবল থেকে উদ্ধার করে। তিনি দাবি করেন যে, তার প্রেমিক তাকে প্রতারণা করে সিরিয়া নিয়ে গিয়েছিল।
ইতোমধ্যে ইরাকি এবং কুর্দি স্থলবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে আইএস ইরাকে তাদের অধিকৃত অর্ধেক এবং সিরিয়ার একটি পঞ্চম অঞ্চল হারিয়েছে।
দ্যা অস্ট্রেলীয়.কম এবং দ্যা টাইমস.ইউকে অবলম্বনে
পাঠকের মতামত