এনটিভি::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত তিন মাসে ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান সংযুক্তা সাহানি।
গত ৫ অক্টোবর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পসহ নানা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে আইওএম।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিবন্ধিত হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে নতুন করে ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এঁদের মধ্যে কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৭ থেকে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ১২ হাজার। আর শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছেন আট থেকে নয় হাজার রোহিঙ্গা। বাকি রোহিঙ্গারা টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রামে আত্মীয়স্বজন কিংবা পরিচিতজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।
আইওএমের আঞ্চলিক প্রধান সাহানি জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।
সাহানি আরো জানান, বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে, তাদের সমন্বয়ে আইওএম নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই জরিপ চালিয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাও এ ব্যাপারে সহায়তা করেছে।
এ ছাড়া আইওএম কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন ও পুরোনো অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার সময় সমন্বয় করছে।
ওই জরিপে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে তথ্য সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও এজেন্সিও অবগত রয়েছে বলে সাক্ষাৎকারে জানান আইওএমের আঞ্চলিক প্রধান।
সংযুক্তা সাহানি বলেন, ‘নতুন করে যেসব রোহিঙ্গা আসছেন, তাঁরা প্রথমে একটি জায়গায় অবস্থান করলেও পরে সে জায়গা পরিবর্তন করছেন। অনেকেই আবার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছেন।’
আইওএমের আঞ্চলিক প্রধান উল্লেখ করেন, বিক্ষিপ্তভাবে থাকলে রোহিঙ্গাদের সমস্যা হওয়ার কথা। কারণ, নির্দিষ্ট একটি এলাকায় থাকলে তাঁদের পরিচয়সত্তা নিয়ে সংশয় থাকত না। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের ঠিকভাবে সহায়তা দিতে পারত।
‘বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল একটি দেশ। তার ওপর বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আগমনে স্থানীয়দের মনে নানা অসন্তোষ থাকতে পারে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও নতুন-পুরোনো যাঁরা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা, তাঁদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসবাস করতে দেওয়াই উচিত’, বলেন সাহানি।
সংযুক্তা সাহানি জানান, জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছেন। অনেকেই আসছেন অসুস্থ ও আহত হয়ে। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। এ ছাড়া বয়স্ক ও শিশুরাও রয়েছে, যারা দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। আর এই রোহিঙ্গাদের আইওএমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
‘আমরা যেটা দেখেছি, নতুন করে যাঁরা আসছেন, তাঁদের অনেকেই বিক্ষিপ্তভাবে এদিকে-ওদিকে আশ্রয় নিচ্ছেন’, বলেন সাহানি।
অনেকেই বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও জানান আইওএমের আঞ্চলিক প্রধান।
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের মংডু জেলার তিনটি সেনাক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের হামলায় অস্ত্র লুট ও দেশটির সেনাসদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মংডুসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে।
ওই সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। গত বছর অন্তত দুই শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসে।
তবে সে দেশের সরকার বিষয়টি অস্বীকার করে ৮০ জন রোহিঙ্গা নিহতের খবর দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে কয়েকশ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।