‘রাজনৈতিক নিপীড়নমূলক বেআইনি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের বন্ধ করা এবং দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ’ জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে চিঠি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের মানুষ আশা করে— আপনার নেতৃত্বে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। আমরা সবসময় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে।’
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল আইজিপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চিঠিটি পৌঁছে দিয়েছেন। এসময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন আইজিপি ও সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে আইজিপিকে উদ্দেশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, সংবিধানের মূলনীতি তথা গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংগ্রামী জনতার হৃৎপিণ্ড। গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যে অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছে, আমরা তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’
চিঠিতে বলা হয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পর্কে আপনি অবগত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১-এ বর্ণিত আছে, ‘আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যেকোনও স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত, আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোনও ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।’
পুলিশের কাছে বিএনপির প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেন ফখরুল। তিনি লিখেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা/কর্মচারী হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবত আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, পুলিশ বাহিনীর অতি উৎসাহী কতিপয় কর্মকর্তা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার এবং নাগরিকের ন্যায়বিচারের অধিকারকে শুধু ক্ষুণ্নই করেনি, কখনও কখনও কতিপয় পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।’
চিঠিতে ফখরুল জানান, ‘এ বছরের আগস্ট থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে ১৬৯টি— যেখানে নাম ধরে আসামি করা হয়েছে ৬,৭২৩ জনকে এবং বেনামে আসামি করা হয়েছে ১৫,০৫০ জনকে।’
আইজিপির প্রতি প্রত্যাশা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পুরো পুলিশ বাহিনীর প্রিন্সিপ্যাল কমান্ডিং অফিসার হিসেবে আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি অবিলম্বে সারাদেশে সব প্রকার গায়েবি, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা দায়ের বিশেষ করে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়ন বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন এবং এসব বন্ধে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
তিনি এও উল্লেখ করেন, ‘সাম্প্রতিককালে এ ধরনের যে সব মামলা দায়ের করা হয়েছে, সে মামলাগুলোর বিষয়ে বিশেষ তদন্তের ব্যবস্থা করে দোষী দায়িত্বপ্রাপ্ত/ কর্মকর্তা/সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আপনাকে আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন
পাঠকের মতামত