পূর্বপশ্চিমবিডি::
নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কোন্দল, দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এমন এমপিদের ঢাকায় ডাকা হচ্ছে। সতর্ক করা হচ্ছে তাদের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে। পাশাপাশি এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সব ধরনের বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশও দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে বেশ কয়েক নেতাকে দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ডেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষে তাদের সতর্ক করেছেন। প্রথম দিকে ঢাকার এমপিদের দলীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট নেতারা। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলার নেতাদেরও ডাকা হবে।
দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ডাক পেয়েছেন এমন দুজন এমপি বলেন, দলীয় সভাপতির পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক তাদেরকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও নৌকার পক্ষে এখন থেকেই ভোট চাওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংসদ সদস্য যারা বেপরোয়া হয়ে গেছেন, যাদের কাজকর্মে জনমনে ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে তাদের ডেকে সতর্ক করে দিচ্ছেন। তাদের ভালো হওয়ার কথা বলেছেন, সংশোধন হওয়ার কথা বলেছেন। জনগণ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, যারা জনগণের দুর্ভোগের কারণ, দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করছেন, বিভেদ তৈরি করছেন, উপদল তৈরি করছেন, আত্মীয়করণ করছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। এটা যেমন আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, সাধারণ সম্পাদকও বলছেন। তিনি বলেন, ঢাকা-২০ আসনের এমপি এম এ মালেককেও দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এম এ মালেক বলেন, ওবায়দুল কাদের আমাকে ডেকেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করো। নির্বাচন কঠিন হবে। তাই এখন থেকেই তোমরা নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ো। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, তার নির্দেশে তোমাদের ডাকছি। তিনি বলেন, শুধু আমাকে নয় ওইদিন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, ঢাকা-১৯ আসনের এনামুর রহমানকেও ডাকা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের আমাদের বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় যারা বিরোধিতা করে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করো। বিতর্কিত এমপি ও নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে সতর্ক করা প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন দলের পক্ষ থেকে তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে প্রার্থীদের ডেকে সতর্ক করলে যতটুকু না ফলদায়ক হবে বরং দলীয়ভাবে দ্বন্দ নিরসনের উদ্যোগটা বেশি ফলদায়ক হবে। কারণ কোনো কারণে বা প্রয়োজনে প্রার্থীদের কোনো গ্রুপ হয়তো তাকে সাপোর্ট করে আবার কোনো গ্রুপ করে না। তো তারা (এমপি বা নেতা) কীভাবে রিলেশন করবে? সুতরাং এটা দলীয়ভাবেই উদ্যোগ নেয়া উচিত। আমি মনে করি যাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তাদের ডেকে দলীয়ভাবে উদ্যোগ নিলে আরও বেশি ফলদায়ক হবে।
এদিকে নির্বাচনকে টার্গেট করে এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকামুখী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা। যোগ দিচ্ছেন নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। বাড়িয়েছেন অনুদানের পরিমাণও। সব মিলিয়ে তাদের টার্গেট আগামী নির্বাচনে আবারও দলের টিকিট পাওয়া। কয়দিন আগেও নির্বাচনী এলাকার মানুষরা যেসব এমপিদের কাছে পাননি এখন সব সময়ই তাদের কাছে পাচ্ছেন। এমপিরা অনেকের বাড়িতে গিয়েও খোঁজ নেয়া শুরু করেছেন। আগে সহকারীদের মাধ্যমে অনুদান দেয়া বা সামাজিক কর্মসূচি পালন করলেও এখন নিজেরাই এসব করছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। কীভাবে জনসংযোগ বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া যায় তা নিয়ে সতর্ক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপিরা। ভোটারদের মন জয় করতে নতুন নতুন প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন কেউ কেউ। এলাকায় যোগাযোগ বাড়াতে কিছুদিন আগে এমপিদের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও। এ কারণে আগে যারা মাসে একবারও এলাকায় আসতেন না তারা সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন থাকছেন এলাকায়।
গত ৭ই মে সংসদ সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এমপিদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন কাউকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচন সহজ হবে না। অনেক কঠিন হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে। সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে কিংবা নির্বাচনকে সহজভাবে নিলে চলবে না। জনগণের কাছে যেতে হবে। কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে তুলে ধরে জনগণের মন জয় করতে হবে। দলীয় প্রধানের ওই নির্দেশনার পর মূলত জনবিচ্ছিন্ন এমপিরা এলাকায় নতুন করে যাতায়াত বাড়িয়ে দেন। সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিতর্কিত ও জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে না।
দেশে চালু শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রায় সব সূচকে অবনতি ঘটেছে। আমানত ও তারল্য কমেছে আগের ...
পাঠকের মতামত