আওয়ামী-লীগ-ফ্ল্যাগজঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে কাঙ্খিত সফলতা পেলে নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথে যেতেও পারে সরকার। শুধু বিএনপির ভেতরেই নয়, আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভেতরেও এ ধরনের একটা চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আভাস দিতে গিয়ে আরও জানান,আগাম নির্বাচনের জন্য আগামীতে দেশি-বিদেশি চাপ কতখানি জোরালো হয় তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। তবে নির্বাচনের দাবিতে দেশি-বিদেশি চাপ সামলে নেওয়ার ক্ষেত্র ক্ষমতাসীনরা তৈরি করতে সক্ষম হলে মেয়াদ পূর্ণ করার চিন্তাও রয়েছে। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালেই নির্বাচন করবে সরকার।
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও সরকারের জনপ্রিয়তা উর্ধ্বমুখী থাকতে থাকতেই নির্বাচন করে নেবে ক্ষমতাসীনরা। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের ভেতরে আছে, সেটা নির্দিষ্ট মেয়াদেও হতে পারে, আবার আগামও হতে পারে। নীতি-নির্ধারকরা এও বলেন, সভা-সমাবেশে ও বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ নেতারা আগাম নির্বাচনের বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও আসলে তা নির্ভর করছে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলে রাজি হয়ে যেতেও পারে দলটি।
আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন জনপ্রিয়তার দিক থেকে তারা এখন উর্ধ্বমুখী। এই উর্ধ্বমুখী অবস্থানে থাকতে থাকতে নির্বাচন তুলে নেওয়ার চিন্তা শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, অনুকূল-প্রতিকূল যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিশেষ করে কল্যাণপুরের ঘটনা দেশে বিদেশে সরকারের তথা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এর ফলে দেশের জনগণ যেমন বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের জঙ্গি দমন করার ক্ষমতা রয়েছে, তেমনি বিদেশিরাও সরকারের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্যে বিশাল অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ইতিমধ্যে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপগুলো জনগণের ভেতরে আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। জঙ্গি মোকাবিলায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এর ভেতর দিয়ে একটি ম্যাসেজ পেয়েছে দলটি। আর তা হলো সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেকগুন। এই মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ ৬০/৭০ ভাগ আসনে জয়ী হবে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তাই নির্বাচনের জন্যে জোরালো কোনও দাবি উত্থাপন করা হলে নির্বাচনের পথে পা বাড়াতে পারে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা আরও বলেন, সম্প্রতি জঙ্গি ইস্যু যেভাবে সরকার মোকাবিলা করেছে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ একটি যাচাই-বাছাই চালিয়েছে। তাতে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন উর্ধ্বমুখী। এর মূল কারণ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করার সামর্থ্য ।
সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এগিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে সকল ভয়-আতঙ্ক কেটে যাবে আমাদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগাম নির্বাচনের প্রশ্নই উঠে না। তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, রাজনৈতিক পরিবেশ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশি বিনিয়োগ-সবই তো ঠিকঠাক আছে। তবে নির্বাচন কেন?
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীও আগাম নির্বাচনের কথা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ছেলের হাতের মোয়া নয় যে, চাইলো আর আমরা দিয়ে দিলাম। মতিয়া বলেন, নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন হবে। কে নির্বাচন চাইলো, আর কে চাইলো না সেটা বিবেচনা করে নির্বাচন হবে না।
জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, কেন আগাম নির্বাচনের কথা আসছে তা আমরা বুঝতে পারি না। দেশে কি কোনও সংকট আছে? জনগণ এখন জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ। আমরা তা মোকাবিলায় কাজ করছি, অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না। নির্বাচন সময়মত হবে। সেই সময় কখন জানতে চাইলে হানিফ বলেন, যখন প্রয়োজন হবে তখন।
জানতে চাইলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আগাম নির্বাচন হয় একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে। তিনি জানতে চান সে ধরনের বিশেষ পরিস্থিতি কি দেশে বিরাজমান? তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্বাচন হবে কি হবে না তা বলা যাবে। আওয়ামী লীগ ও সরকার এখন জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা নিয়ে ব্যস্ত।
সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন।