-- পারভীন সুলতানা কাকলী
পৃথিবীর আদিতে নর-নারীর মনে যে অনুভুতি হয় তার নাম প্রেম। আবার দুটি মনের মিলন আর আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে যে শ^াশত জীবনের হাতছানি ফুটে উঠে তাকেই প্রেম বলে। যেখানে থাকবে সূরের অমিয় মূর্ছনা। দূঃখ-সুখে গাঁথা জীবনের অনাবিল এক পার্থিব জগৎ।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, প্রেম কারো জন্য সফলতা আবারো কারো কাছে ব্যর্থতার প্রতীক। আবার কারো জীবনে প্রেম এনে দিয়েছে অমরতা। অমরতা তো নয়ই, প্রেম আমার জীবনে ধরা দিয়েছে আশা-নিরাশা ও ব্যর্থতার এক নির্মম প্রতীক হয়ে।
প্রিয়, তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে ক্ষণে ক্ষণে নিয়ে যায় জীবনের স্বর্ণালী অতীতে। এখনো ভুলতে পারিনি আজো সেই মধুর দিনগুলি। আমি জানি আজকের তুমি সেই তুমি নও। এখনো জানা হলোনা, তোমার কাছে আমার জীবনের মূল্য কতটুকু। তাইতো আগুনের অদৃশ্য লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়েছি বার বার। যদিও অদেখা, অপরিচিতা, অচেনা হয়েও তোর মায়াজালে বন্দি হয়েছিলাম।
প্রিয়, তোমার সামনের পাহাড়ি ঝর্ণার কান্নার ধ্বনি শুনে ভীত হইও না। এইতো আমার ভালোবাসা কাঁদছে। আর কাঁদাইয়ো না। কারণ এখনো তোমায খুজি, সেই ধান কুড়ানো বালিকার মতো। কখনো কখনো খুজে বেড়াই কোন এক চাঁদনী রাতে নীল আকাশের পেজি তুলোর ন্যায় উড়ে বেড়ানো শুভ্র মেঘের ভীড়ে। নীল আকাশের ছায়া বিথীর নিচে দাঁড়ানো আম গাছের সবুজ মগডালে দাঁড়ানো সদ্য ফোটা হলদেটে মুকুলের সুগন্ধ ছড়ানো সন্ধ্যায় তোমায় খুজে ফিরি। ক্লান্ত হৃদয়খানি নিয়ে যখন রাতে ঘুমাতে যাই, ঘুম আসে না। বালিশ ভিজে দু’চোখের নোনাজলে। কম্বলে মুখ লুকিয়ে কাঁদি, যেন হৃদয়ের এ হাহাকার অন্যের কাছে ধরা না পড়ে।
আমার ফেলে আসা দিনগুলো আজও বেদনায় ভারাক্রান্ত। দূঃখের সাগরে হৃদয়ের কান্না-হাহাকার ভেসে বেড়ায় পাল তোলা নাওয়ের মতো। শ্যাওলা যেমন বাসা বাঁধে পানিতে। তেমনি সে পানির ¯্রােতেই শ্যাওলার সাজানো বসতি ভেসে গিয়ে তচনছ হয়ে যায়। ঠিক এমন করে আমার ভালোবাসা-ভালোলাগার কাছেই তচনছ হলো আমার স্বপ্নের সাজানো রঙিন বাসর। যেন সাতসমুদ্রে নিক্ষেপ হলো আমার হাজার বছরের সঞ্চিত ভালোবাসার ভান্ডার। এ যেন বুকের ভেতর প্রচন্ড আঘাত। ক্ষত বিক্ষত হওয়া কোমল হৃদয়ের শব্দহীন আর্তনাদ।
প্রিয়, ভালোবাসা শূণ্যতার নয়, পূর্ণতার। তবে কেন শূন্যতা এসে আমায় গ্রাস করলো? আমার শত ব্যর্থতা আর হতাশার মাঝে আশান্বিত হই এই ভেবে যে, শূণ্য হৃদয় নিয়েও অনুভব করি প্রশান্তির বিশাল আবহ। তাই হাহাকার-শূণ্যতা তাড়াতে উচ্ছ্বাসে ছুড়ে বেড়াই তোমার স্বপ্নীল পরশে। তাই এখনো প্রতিটি অনুভবে জেগে উঠি, হাজারো নিরাশা আর ব্যাকুলতা ধন্য হবে তোমায় পেলে।
প্রিয়, ভালোবাসা আর ভালোলাগা কখনো এক হয় না। সত্যিই কি সেদিন তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে। ভালোলাগা হয় চোখ থেকে, আর ভালোবাসা হয় মন থেকে। শুধু আমাকে কেন, যাকেই ভালোবাসো মন থেকে ভালোবাসো। অভিনয় করে ভালোবাসা যায় না। অভিনয় কেবল ভালোবাসাকেই অপমান করে, জর্জরিত করে দেয় একটি সুন্দর মনকে।
প্রিয়, তুমি বলেছিলো-আমার ভালোবাসা ফরমালিন বিহীন। আর আমার সব স্মৃতি তোমার কাছে তীর-ধনুকের মত কাজ করে। আমি কি করে ভুলব তোমায়। তাইতো ভাবি, জীবনটা কালো মেঘের আড়ালেই থেকে গেলো। এরপরও দূঃখকে সুখ ভেবে বারবার কুড়িয়ে নিই আপন ডালায়। আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত। কারণ আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমার কষ্ট সম্ভার। আমার হৃদয়ে আজ স্পন্দন বেড়েছে। আমি গর্বিত তোমাকে নিয়ে।
প্রিয়, রজনীগন্ধা ফুলে যখন জোছনা নামে-তখন একটি বার আমায় মনে করো। আমি আর কতকাল ভালোবাসার দহনে পুড়ে পুড়ে কাঁতরাবো বলো। এরচেয়ে মরে যাওয়াটাই কি শ্রেয় নয়? প্রিয় তোর জন্য ভালোবাসা ঠিক আগের মতই আছে। শুধু তোমার অনিচ্ছাজনিত বোঝার স্বক্ষমতাই যেন আর নেই। আজ হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে। ভাবছিলাম স্বপ্নের রঙিন পসরাগুলো তোমায় সাজিয়ে লিখে নিজের মনকেও রাঙিয়ে নেবো। কই, সেই ইচ্ছে তো পূরণ করতে দিলে না। তুমি মানুষটা আমার মননে ঠাঁই নিয়ে বিচরণ কর সর্বদা। তাই কলমের কালিতে ফুটে উঠে দূঃখ-কষ্টের অবিরাম আর্ত-চিৎকার।
রঙিন স্বপ্ন কুড়াতে গিয়ে যেন আমার মত যেন কেউ কষ্টের ফেরিওয়ালা না হয়। নতুন পথের যাত্রীদের বলি, হাটার সময় যেন পা পিঁছলে না পড়ো। শ^াশত ভালোবাসার সন্ধানে সঠিক পথে এগিয়ে চলো। যদিও সে পথ হয়. কষ্ট আর সংযমের।
কবির ভাষায়,
ধৈর্য্য ধরো ধৈর্য্য ধরো, বাধো বাধো বুক
শতদিকে শত দূঃখ, আসোক আসোক।
লেখক ঃ পারভীন সুলতানা কাকলী
ঠিকানা ঃ রামু, কক্সবাজার।
তারিখ ঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯